নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানার কুতুবপুর ইউনিয়নের দেলপাড়া টাওয়ারপাড় এলাকায় জেলা প্রশাসনের অনুমতি ছাড়াই মেলার নামে চালানো হচ্ছে প্রকাশ্য জুয়া ও মাদকের আসর। আয়োজক হিসেবে উঠে এসেছে পলাশ শেখ নামে একজনের নাম, যিনি নিজেকে ফতুল্লা থানা শ্রমিক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক দাবি করছেন।
জানা গেছে, গত ২৫ মার্চ জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করলেও অনুমতি না পাওয়ায় পলাশ শেখ একটি জাল সীল ও অনুস্বাক্ষরসহ অনুমতির অনুলিপি ব্যবহার করে মেলার আয়োজন চালিয়ে যাচ্ছেন। এ কাজে স্থানীয় বিএনপির কিছু প্রভাবশালী নেতার প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সহায়তার অভিযোগ উঠেছে।
সন্ধ্যার পর থেকেই উঠতি বয়সের তরুণরা মেলায় ভিড় করছে জুয়া খেলতে। এর পাশাপাশিই চলছে মাদকের অবাধ বিকিকিনি। গত ২০ দিন ধরে এ মেলার কারণে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। একবার পুলিশ মেলা বন্ধ করলেও পুনরায় প্রভাব খাটিয়ে তা চালু করা হয়েছে।
‘দৈনিক বন্ধু র্যাফেল ড্র’-এর নামে চলছে মূলত বিভিন্ন ধরনের জুয়া খেলা। প্যান্ডেলের আড়ালে চলা এই খেলায় নিরাপত্তার নামে মোতায়েন থাকে আয়োজকের অনুগত ক্যাডার বাহিনী। কেউ ছবি তুলতে গেলেই হেনস্থার শিকার হন। সন্ধ্যা থেকে রাতভর চলে এসব কর্মকাণ্ড।
জেলা প্রশাসনের দপ্তরে অনুসন্ধান করে জানা গেছে, এই মেলার জন্য কোনো অনুমতিই দেওয়া হয়নি। জেলা প্রশাসক মো. জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, “অবৈধ মেলার বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আবারও চালু হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
ফতুল্লা মডেল থানার ওসি শরিফুল ইসলাম বলেন, “একবার অভিযান চালিয়ে মেলা বন্ধ করেছি, এখন তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
অভিযুক্ত পলাশ শেখ বলেন, “আমরা র্যাফেল ড্র করি, এটা জুয়া নয়। মেলার বাইরে কেউ মাদক বিক্রি করলে আমার কিছু করার নেই।” তবে ফতুল্লা থানা শ্রমিক দলের আহ্বায়ক শাহআলম ও বিএনপির সভাপতি শহীদুল ইসলাম টিটু জানিয়েছেন, তারা পলাশ শেখকে চেনেন না এবং তিনি তাদের দলে নেই।
বর্তমানে দেশের এসএসসি পরীক্ষা চলমান। অথচ এই সময়েও কুতুবপুরের একাধিক এলাকায় প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিদের উদ্যোগে অনুমতি ছাড়া মেলা আয়োজন অব্যাহত রয়েছে। মেলায় উচ্চ শব্দে মাইক বাজানো, রাতভর জুয়া ও মাদকের আসর চলায় পরীক্ষার্থীদের পড়াশোনায় মারাত্মক ব্যাঘাত ঘটছে।
এ নিয়ে পরীক্ষার্থীদের অভিভাবকদের মধ্যে চরম অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। তারা প্রশ্ন তুলেছেন, “রাজনৈতিক নেতা-কর্মীরা যদি নিজেরাই এমন দায়িত্বজ্ঞানহীন কাজ করেন, তাহলে ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যৎ কীভাবে নিরাপদ থাকবে?”
অনেক অভিভাবকের অভিযোগ, প্রশাসন এসব মেলা বন্ধ করতে ব্যর্থ হচ্ছে, বরং নিরব ভূমিকা পালন করছে। এ প্রসঙ্গে কেউ কেউ বলেছেন, “প্রশাসন কি তাহলে প্রভাবশালী মহলের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে?” তারা দ্রুত মেলা বন্ধ ও আয়োজকদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন।
স্থানীয়রা আরও বলছেন, প্রশাসনের ছত্রছায়ায় মেলা চলছে। সাধারণ মানুষ সেখানে যায় না, মূলত মাদক ও জুয়ার জন্যই সেখানে সমাগম হয়।