ফ্রান্সের অন্যতম বৃহৎ পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র গ্রেভলাইন্স হঠাৎ বন্ধ করে দিতে হয়েছে জেলিফিশের একটি বিশাল ঝাঁকের কারণে। বিদ্যুৎকেন্দ্রের পরিচালক বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। গভীর রাতে বিপুল সংখ্যক জেলিফিশ কুলিং সিস্টেমের পানির ফিল্টারে আটকে যাওয়ায় রিঅ্যাক্টরগুলোতে প্রয়োজনীয় ঠান্ডা পানি সরবরাহে বাধা সৃষ্টি হয়। ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতি এড়াতে কর্তৃপক্ষ আপাতত পুরো কেন্দ্র বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়।
উত্তর ফ্রান্সের উপকূলে অবস্থিত এই কেন্দ্রটি ছয়টি ইউনিটে মোট ৫.৪ গিগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম, যা অন্তত ৫০ লাখ পরিবারে বিদ্যুৎ সরবরাহ করত। সরকারি জ্বালানি সংস্থা ইডিএফ পরিচালিত এই কেন্দ্রের চারটি ইউনিট স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যায়, কারণ দুটি ইউনিট আগে থেকেই রক্ষণাবেক্ষণের জন্য অচল ছিল। ফলে পুরো কেন্দ্রই অচল হয়ে পড়ে। ইডিএফ জানিয়েছে, পরিস্থিতি মূল্যায়ন চলছে এবং নিরাপদে পুনরায় চালুর প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
গ্রেভলাইন্স বিদ্যুৎকেন্দ্রের পাম্পিং স্টেশন উত্তর সাগরের পানি ব্যবহার করে রিঅ্যাক্টরগুলো ঠান্ডা রাখে। কিন্তু হঠাৎ করেই ফিল্টারে জেলিফিশ জমে যাওয়ায় সিস্টেম বিকল হয়ে পড়ে। সংস্থাটি আশ্বস্ত করেছে, এই ঘটনার কারণে নিরাপত্তা, কর্মী বা পরিবেশের উপর কোনো বিরূপ প্রভাব পড়েনি।
বিজ্ঞানীরা এই অস্বাভাবিক জেলিফিশ উপস্থিতির জন্য জলবায়ু পরিবর্তনকে দায়ী করছেন। উষ্ণ পানিতে জেলিফিশ দ্রুত বংশবৃদ্ধি করে, ফলে তারা শীতল অঞ্চল থেকে উষ্ণ উপকূলে চলে আসে। শুধু ফ্রান্স নয়, জেলিফিশের প্রাচুর্য ইতোমধ্যেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিদ্যুৎকেন্দ্র ও বন্দর ব্যবস্থাপনায় বিঘ্ন সৃষ্টি করছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ফ্রান্সে দেখা যাওয়া জেলিফিশগুলো এশিয়ান মুন প্রজাতির। যদিও এগুলো বিষাক্ত নয়, সংখ্যায় অত্যধিক হওয়ায় বড় ধরনের প্রযুক্তিগত সমস্যার কারণ হতে পারে। এই প্রজাতি প্রথমবার উত্তর সাগরে শনাক্ত হয় ২০২০ সালে এবং এরপর থেকেই এর সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে।