রাজধানীর গুলিস্তানে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে পতিত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়টিতে নতুন রূপে যাত্রা শুরু হচ্ছে। এতদিন ভবনটির সামনেই টানানো ছিল ‘জুলাইযোদ্ধার প্রধান কার্যালয়’ ব্যানার। তবে এবার সেখানে টানানো হয়েছে দুটি নতুন ব্যানার—‘আন্তর্জাতিক ফ্যাসিজম ও গণহত্যা গবেষণা ইনস্টিটিউট’। এই ব্যানার টানিয়েই ভবনটির পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কাজ শুরু হয়েছে।
প্রায় এক বছর ধরে পরিত্যক্ত ভবনটি বর্তমানে ফের ব্যবহার উপযোগী করে তোলার প্রক্রিয়া চলছে। বুধবার (১৭ জুলাই) থেকে ১০ তলা বিশিষ্ট এই ভবনটি ধাপে ধাপে পরিষ্কার করা শুরু হয়। বৃহস্পতিবার ভবনের বিভিন্ন তলায় ১০-১২ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মীকে কাজ করতে দেখা গেছে। তারা জানান, পুরো ভবনটি পরিষ্কার করা হবে এবং ভবিষ্যতে এটি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সংগঠকদের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, তৃতীয় তলায় জমে থাকা ইটের খোয়া ও আবর্জনার স্তূপ সরানো হচ্ছে। দোতলার আবর্জনা ইতোমধ্যে পরিষ্কার করা হয়েছে। তার আগের দিন, অর্থাৎ বুধবার সকাল থেকে ভবনের নিচতলা পরিষ্কার শুরু হয়।
পরিচ্ছন্নতার পাশাপাশি দেখা গেছে, ভবনের সামনে প্লাস্টিকের চেয়ারে বসে ছিলেন কিছু ব্যক্তি। অনেক পথচারীকেও দেখা গেছে ভবনটির ছবি তুলতে।
পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা জানান, ভবনটি সম্পূর্ণ পরিষ্কারের পর এটি হস্তান্তর করা হবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত সংগঠনগুলোর কাছে। এই ভবনে জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থনে আহত এবং শহীদ পরিবারের জন্য একটি অফিস খোলা হবে। যদিও ‘আন্তর্জাতিক ফ্যাসিজম ও গণহত্যা গবেষণা ইনস্টিটিউট’ বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে তারা রাজি হননি। তাদের ভাষায়, ভবনের কোন তলায় কী হবে, তা সিদ্ধান্ত নেবেন ছাত্র-জনতা নিজেরাই।
২০২৩ সালের ৫ আগস্ট বিকেলে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের সময় এই ভবনেই ঘটে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা। এরপর সেখানে চলে ব্যাপক লুটপাট। ভবনের আসবাবপত্র ও ধাতব সামগ্রী খুলে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। সেই থেকে ভবনটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকে।
এই ভবনটি ছিন্নমূল মানুষ, রিকশাচালক ও ভাসমান নেশাগ্রস্তদের শৌচাগার ও আড্ডাস্থলে পরিণত হয়। মলমূত্র ও আবর্জনার স্তূপের কারণে আশপাশের এলাকায় ছিল তীব্র দুর্গন্ধ। পথচারীদের অনেকেই নাক চেপে চলাচল করতেন।
উল্লেখ্য, গুলিস্তানের পুরোনো কার্যালয় ভেঙে এই ১০ তলা ভবনটি নির্মাণ করা হয়। ২০১৮ সালের ২৩ জুন শেখ হাসিনা এই ভবনের উদ্বোধন করেন। এটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছিল প্রায় ১০ কোটি টাকা। আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন দৃষ্টিনন্দন ভবনটি তখন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হতো।
কয়েক মাস আগে ‘জুলাইযোদ্ধার প্রধান কার্যালয়’ ব্যানার টানানো হলেও ভবনটি ব্যবহৃত হচ্ছিল না। এবার নতুন ব্যানার ও কার্যক্রম শুরু হওয়ায় ভবনটি নতুন পরিচয়ে ফিরে আসতে যাচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।