
অন্তর্বর্তী সরকারের দুই গুরুত্বপূর্ণ উপদেষ্টা মাহফুজ আলম এবং আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া তাদের দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করেছেন। বুধবার (১০ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় তারা পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন বলে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র নিশ্চিত করেছে। তাদের পদত্যাগে জুলাই গণ-অভ্যুত্থান-পরবর্তী পরিবর্তনশীল রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় নতুন আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্র প্রতিনিধিদের মধ্য থেকে প্রথম সারির নেতৃত্ব পেয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদ। তাদের মধ্যে মাহফুজ আলম দায়িত্ব পালন করছিলেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে। অপরদিকে আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া কর্মরত ছিলেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় (এলজিআরডি) মন্ত্রণালয় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বড় পরিবর্তন আসে। তার পরপরই ৮ আগস্ট নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে ২৩ সদস্যের অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। ছাত্র প্রতিনিধিরা নতুন পরিবর্তনের প্রতীক হিসেবে সেই পরিষদে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছিলেন। কিন্তু আজকের পদত্যাগের মধ্য দিয়ে দুই তরুণ উপদেষ্টা পরিষদ থেকে বিদায় নিলেন।
এর আগে ছাত্র প্রতিনিধি নাহিদ ইসলাম গত ২৫ ফেব্রুয়ারি উপদেষ্টার পদত্যাগ করেন এবং পরে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক হন। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া তরুণদের উদ্যোগেই দলটি গঠিত হয়, যা পরে জাতীয় রাজনীতিতে নতুন আলোচনার জন্ম দেয়।
মাহফুজ আলম রাজনীতিতে তার যাত্রা শুরু করেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী হিসেবে (নিয়োগ: ২৮ আগস্ট ২০২৪)। পরে ১০ নভেম্বর তিনি উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেন। নাহিদ ইসলাম পদত্যাগ করার পর তাকে তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টার দায়িত্ব দেওয়া হয়, যেখানে তিনি দ্রুতই আলোচনায় উঠে আসেন।
অন্যদিকে আসিফ মাহমুদ প্রথমে শ্রম ও যুব–ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান। পরে এ এফ হাসান আরিফকে সরিয়ে তাকে গত বছরের নভেম্বরে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা করা হয়। এরপর থেকে তিনি স্থানীয় সরকার ও যুব–ক্রীড়া—উভয় মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব সামলে আসছিলেন।
দুই তরুণ উপদেষ্টার হঠাৎ পদত্যাগে অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যক্রম, ভবিষ্যৎ নীতি ও ছাত্র নেতৃত্বের ভূমিকা নিয়ে নতুন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এটি অন্তর্বর্তী সরকারের ভেতরকার পরিবর্তনশীল গতিশীলতার একটি গুরুত্বপূর্ণ সংকেত।