
মাত্র ৭২ ঘণ্টায় মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার ছয়টি দেশে ভয়াবহ হামলা চালিয়েছে ইসরাইলি সেনাবাহিনী। গত ৮ থেকে ১০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ফিলিস্তিন, লেবানন, সিরিয়া, তিউনিসিয়া, কাতার ও ইয়েমেনে বিমান ও ড্রোন হামলায় অন্তত ২০০ মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন এবং আহত হয়েছেন এক হাজারেরও বেশি মানুষ। এই আক্রমণের পর অঞ্চলজুড়ে নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে।
ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু জানিয়েছেন, “নাইন ইলেভেন হামলার পর যুক্তরাষ্ট্র যা করেছিল, আমরাও এখন তাই করছি।” তবে কাতারে হামলার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে নেতানিয়াহুর ফোনালাপে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়। ট্রাম্প এই হামলাকে ‘অবিবেচনাপ্রসূত পদক্ষেপ’ বলে আখ্যা দেন এবং নেতানিয়াহুর ওপর তীব্র হতাশা প্রকাশ করেন।
৯ সেপ্টেম্বর কাতারের রাজধানী দোহায় হামাসের একটি অফিস ভবনকে লক্ষ্যবস্তু করে বিমান হামলা চালায় ইসরাইল। এসময় নিহত হন হামাস নেতা খলিল আল-হাইয়ার ছেলে হুমাম, তিনজন দেহরক্ষী, একজন কাতারি নিরাপত্তা কর্মকর্তা এবং আরও একজন কর্মী। যদিও হামাসের শীর্ষ নেতৃত্ব ঐ হামলা থেকে বেঁচে যায়।
গাজায় চলমান আগ্রাসনের ৭০২তম দিনে ইসরাইলি সেনারা ভয়াবহ হামলা চালায়। কেবল সোমবারেই নিহত হন ৬৭ জন এবং আহত হন ৩২০ জন। এর মধ্যে ১৪ জন নিহত হন ত্রাণ সংগ্রহের সময়। পরদিন মঙ্গলবার আরও ৮৩ জন নিহত এবং ২২৩ জন আহত হন।
লেবাননের বেকা ও হারমেল জেলায় ইসরাইলি যুদ্ধবিমান হিজবুল্লাহর অস্ত্রের গুদাম লক্ষ্য করে হামলা চালায়, এতে অন্তত পাঁচজন নিহত হন। একই রাতে সিরিয়ার হোমস এবং লাতাকিয়ার সামরিক স্থাপনাগুলোতে হামলা হয়। সিরিয়া একে জাতীয় নিরাপত্তার সরাসরি হুমকি এবং আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন বলে নিন্দা জানিয়েছে।
তিউনিসিয়ার সিদি বো সাইদ বন্দরে নোঙর করা ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’র প্রধান জাহাজে সন্দেহভাজন ইসরাইলি ড্রোন আঘাত হানে, যাতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটে। পরদিন কাতারে হামলা চালানোর পর ইসরাইলি সেনারা ইয়েমেনের রাজধানী সানা ও আল-জাওফ প্রদেশে বিমান হামলা চালায়। ইয়েমেনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, এসব হামলায় অন্তত ৩৫ জন নিহত ও ১৩১ জন আহত হন।
কাতারে হামলার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ক্ষোভ প্রকাশ করে নেতানিয়াহুকে বলেন, “এটি এমন এক মিত্র দেশের ওপর আঘাত, যারা গাজায় যুদ্ধবিরতি আনার চেষ্টা করছে।” জবাবে নেতানিয়াহু জানান, আক্রমণের সুযোগ সীমিত সময়ের জন্য ছিল বলে তিনি তা কাজে লাগিয়েছেন। যদিও পরবর্তী ফোনালাপে পরিবেশ কিছুটা শান্ত হয়, তবে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নেতানিয়াহুর একতরফা পদক্ষেপের কারণে ট্রাম্প ক্রমেই তার ওপর বিরক্ত হচ্ছেন।
এই ধারাবাহিক হামলা মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে সংঘাত বাড়িয়ে তুলছে। আন্তর্জাতিক মহল উদ্বেগ প্রকাশ করলেও এখনো কার্যকর প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি।