রংপুর বিভাগ তিস্তা নদী রক্ষায় উত্তাল হয়ে উঠেছে। ‘জাগো বাহে তিস্তা বাঁচাও’ আন্দোলনের অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) সন্ধ্যায় তিস্তা নদীর ১০৫ কিলোমিটারজুড়ে একযোগে মশাল প্রজ্জ্বলন কর্মসূচি পালিত হয়। এই কর্মসূচিতে অংশ নেন তিস্তা তীরবর্তী হাজারো মানুষ, যারা দ্রুত তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের জোরালো দাবি জানান।
রংপুর বিভাগের পাঁচ জেলা—লালমনিরহাট, রংপুর, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধার ১১টি পয়েন্টে একযোগে এই প্রতীকী কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। এতে অংশ নেন লক্ষাধিক মানুষ, যাদের কণ্ঠে ছিল একটাই দাবি: “তিস্তা মহাপরিকল্পনা দ্রুত বাস্তবায়ন করুন।”
কর্মসূচির উদ্বোধন করেন ‘তিস্তা রক্ষা আন্দোলন’-এর প্রধান সমন্বয়ক, সাবেক উপমন্ত্রী ও বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু। তিনি বলেন, “তিস্তা শুধু রংপুর বিভাগের নদী নয়, এটি বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রাণ। মহাপরিকল্পনার কাজ অবিলম্বে শুরু না হলে বৃহত্তর আন্দোলনের মাধ্যমে রংপুর বিভাগকে অচল করা হবে। তিস্তা এখন আর স্থানীয় কোনো ইস্যু নয়, এটি জাতীয় সমস্যা।”
দুলু আরও সতর্ক করেন, সরকারের ধীরগতি ও অবহেলা নদীর জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে এবং সময়মতো পদক্ষেপ না নিলে দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা তৈরি হবে। তিনি নভেম্বরের মধ্যেই মহাপরিকল্পনার কাজ শুরু করার আলটিমেটাম দেন এবং প্রয়োজন হলে লংমার্চসহ কঠোর কর্মসূচি দেওয়ারও হুমকি দেন।
মশাল প্রজ্জ্বলন কর্মসূচিতে অংশ নেন রংপুর বিভাগের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন, ছাত্র ও যুবসমাজের নেতাকর্মীরা। তাঁদের স্লোগান ছিল— “জাগো বাহে তিস্তা বাঁচাও, তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা চাও!” অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন তিস্তা রক্ষা আন্দোলন কমিটির সভাপতি নজরুল ইসলাম হাক্কানী, লালমনিরহাট জেলা সমন্বয়ক এ কে এম মমিনুল হক এবং আন্দোলনের অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
জানা গেছে, তিস্তা নদীর ভাঙন ও চর জাগার কারণে গত কয়েক মাসে লক্ষাধিক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। বিলীন হয়েছে কৃষিজমি, বসতভিটা, এবং পরিবেশের ওপর পড়েছে বিরূপ প্রভাব। তিস্তা রক্ষা আন্দোলনের নেতারা দীর্ঘদিন ধরেই নদীর ড্রেজিং, বাঁধ নির্মাণ ও পাইলট প্রকল্প বাস্তবায়নের দাবি জানিয়ে আসছেন। এর আগে রংপুর ও লালমনিরহাটে গণমিছিল, গণসমাবেশ, পদযাত্রা এবং স্মারকলিপি প্রদানসহ নানা কর্মসূচি পালন করা হয়েছে।