
সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্স (সাবেক টুইটার)–এ পাকিস্তানের কারাবন্দী সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান সম্পর্কিত পোস্টগুলো ইচ্ছাকৃতভাবে দমন করা হচ্ছে—এমন অভিযোগ তুলেছেন তার প্রাক্তন স্ত্রী জেমিমা গোল্ডস্মিথ। ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফ-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইলন মাস্কের মালিকানাধীন এক্সের বিরুদ্ধে তিনি ‘গোপনে থ্রোটলিং’ বা অ্যালগরিদমিকভাবে পোস্টের পৌঁছানো সীমিত করার অভিযোগ এনেছেন।
৭৩ বছর বয়সী ইমরান খান ২০২৩ সালের আগস্টে দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকে পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডির একটি কারাগারে বন্দী রয়েছেন। তিনি শুরু থেকেই দাবি করে আসছেন, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তাকে সাজা দিয়ে আটক রাখা হয়েছে। তার পরিবার জানিয়েছে, তাকে কার্যত একটি ‘ডেথ সেলে’ নির্জন অবস্থায় রাখা হয়েছে এবং বাইরের জগতের সঙ্গে যোগাযোগ কঠোরভাবে সীমিত।
১৯৯৫ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত ইমরান খানের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ থাকা ৫১ বছর বয়সী জেমিমা গোল্ডস্মিথ ইনস্টাগ্রাম ও এক্সে দেওয়া একাধিক পোস্টে অভিযোগ করেন, ইমরানের কারাবাস, জেলের অবস্থা কিংবা সন্তানদের বাবার সঙ্গে যোগাযোগের সুযোগ নিয়ে কিছু লিখলেই এক্সের অ্যালগরিদম পোস্টগুলোর দৃশ্যমানতা কমিয়ে দেয়।
জেমিমা আরও দাবি করেন, এক্স-এর এআই চ্যাটবট ‘গ্রোক’–এর তথ্য অনুযায়ী পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ ইমরান খানের সমালোচনা দমনকে তাদের শীর্ষ অনলাইন আইন প্রয়োগকারী অগ্রাধিকার হিসেবে দেখছে। তার ভাষায়, এই কারণেই এক্স নীরবে সেই চাপ মেনে নিচ্ছে, যাতে পাকিস্তানে প্ল্যাটফর্মটির কার্যক্রম বজায় রাখা যায়।
তিনি জানান, পাকিস্তানের সব টিভি ও রেডিও স্টেশনে ইমরান খানের নাম ও ছবি কার্যত নিষিদ্ধ। কারাবন্দী হওয়ার পর থেকে তার একমাত্র প্রকাশ্য ছবি হলো একটি আদালতে তোলা ছবি, যা বিভিন্ন গণমাধ্যমে ব্যবহৃত হচ্ছে।
ইলন মাস্ককে সরাসরি উদ্দেশ করে জেমিমা বলেন, ইমরানের বিরুদ্ধে চলমান অবিচার তুলে ধরার জন্য এক্সই ছিল তাদের হাতে থাকা একমাত্র স্বাধীন প্ল্যাটফর্ম। অথচ বাকস্বাধীনতা রক্ষার প্রতিশ্রুতি দেওয়া সত্ত্বেও এখন সেই কণ্ঠস্বরই নীরব করা হচ্ছে।
তিনি আরও দাবি করেন, ২০২৫ সালে এক্স-এ তার পোস্টের ভিউ ৯৭ শতাংশ পর্যন্ত কমে গেছে। ২০২৩ সালের শুরুর দিক থেকে প্রতি মাসে তার পোস্টে ৪০০ মিলিয়ন থেকে ৯০০ মিলিয়ন ভিউ কমেছে বলে জানান তিনি। এই পরিসংখ্যানকে তিনি ‘সুস্পষ্ট ডিজিটাল সেন্সরশিপ’-এর প্রমাণ হিসেবে উল্লেখ করেন।
এই অভিযোগ সামনে আসার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বাকস্বাধীনতা, রাজনৈতিক চাপ এবং বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা নিয়ে নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়েছে।