
পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার শাঁখারীকাঠী গ্রামের কালিগঙ্গা নদীতে দীর্ঘ এক যুগ পর অনুষ্ঠিত হলো গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা। বুধবার (২২ অক্টোবর) বিকেলে হিন্দু ধর্মালম্বীদের অন্যতম উৎসব কালীপূজার পরের দিন, দশহোরা উপলক্ষে এই উৎসবমুখর প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়।
নৌকা বাইচ শুরু হওয়ার আগেই নদীর দুই তীরে ছিল জনসমুদ্র। শিশুসহ নানা বয়সের মানুষের ভিড়ে দুই পাড় লোকে লোকারণ্য হয়ে ওঠে। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর এমন আয়োজন দেখতে জেলার বাইরে থেকেও হাজারো মানুষ ভিড় জমায়।
বাংলার গ্রামীণ জীবনের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী উৎসব হলো নৌকা বাইচ। বর্ষা মৌসুমে এ প্রতিযোগিতা একসময় ছিল গ্রামীণ বিনোদনের মূল আকর্ষণ। তবে খাল, বিল ও নদী শুকিয়ে যাওয়ায় এ আয়োজন ধীরে ধীরে বিলুপ্তির পথে। এক সময় এই কালিগঙ্গা নদীতে নিয়মিত নৌকা বাইচ হলেও এখন তা বিরল দৃশ্য।
দীর্ঘদিন পর এমন আয়োজন দেখে দর্শক-শ্রোতারা উচ্ছ্বসিত। এ বছর প্রতিযোগিতায় মোট চারটি নৌকা অংশ নেয়, যা দর্শকদের মধ্যে বিশেষ আগ্রহ সৃষ্টি করে।
পিরোজপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক নজরুল ইসলাম খান বলেন, “গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী নৌকা বাইচ আমাদের অতীতের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। মাদকমুক্ত সমাজ গড়তে হলে এ ধরনের সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা আয়োজন করা খুব জরুরি।”
স্থানীয় দর্শনার্থী আকলিমা বেগম বলেন, “আমি পরিবারের সবাইকে নিয়ে নৌকা বাইচ দেখতে এসেছি। সত্যিই এটি এক মনোমুগ্ধকর আয়োজন ছিল। প্রতিবছর এমন আয়োজন করলে আমাদের গ্রামের মানুষ অনেক আনন্দ পাবে।”
নাজিরপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. ফরিদ আল মাহমুদ ভূঁইয়া বলেন, “এ ধরনের আয়োজন গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যকে ধারণ করে। কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই প্রতিযোগিতা সম্পন্ন হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে গোয়েন্দা সংস্থা ও পুলিশের একাধিক ইউনিট কাজ করেছে।”
এই নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা শুধু একটি উৎসব নয়, বরং হারিয়ে যাওয়া গ্রামীণ সংস্কৃতির পুনর্জাগরণের প্রতীক। স্থানীয়রা আশা প্রকাশ করেছেন, আগামী বছরগুলোতেও নিয়মিতভাবে এমন আয়োজন হবে, যা নবীন প্রজন্মকে বাংলার ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সঙ্গে নতুনভাবে পরিচিত করবে।