
অন্তর্বর্তী সরকার জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন একই সঙ্গে গণভোট আয়োজনের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করলেও, মঙ্গলবার (১৭ নভেম্বর) পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন (ইসি) গণভোট আয়োজনের বিষয়ে সরকারের কাছ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক নির্দেশনা পায়নি। সরকারের ঘোষণার পাঁচ দিন পরও ইসিতে পৌঁছায়নি কোনো চিঠি বা নোটিশ।
গত ১৩ নভেম্বর সরকার গণভোট আয়োজনের ঘোষণা দেয় এবং সেদিনই সংবিধান সংস্কার সনদ সম্পর্কিত আদেশ জারি হয়। তবে ইসি পুরো প্রক্রিয়ার নির্দেশনার অপেক্ষায় আছে।
ইসি সচিব আখতার আহমেদ নির্বাচন ভবনে ব্রিফিংয়ে জানান, “গণভোটের বিষয়ে এখনো কোনো নির্দেশনা পাইনি। সরকারের নির্দেশনা পাওয়ার পরই কর্মপরিকল্পনা জানানো হবে।”
এদিকে ইসির কর্মকর্তারা জানান, আনুষ্ঠানিক নির্দেশনা না এলেও তারা অভ্যন্তরীণভাবে সম্ভাব্য প্রস্তুতি নিয়ে আলাপ শুরু করেছেন।
ইসি সূত্র জানায়, আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি এখন শেষ পর্যায়ে। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হতে পারে। জাতীয় নির্বাচনের মতোই গণভোটও ইসিকেই আয়োজন করতে হবে।
তবে গণভোট আয়োজনের আগে একটি নতুন গণভোট আইন বা অধ্যাদেশ প্রণয়ন জরুরি। বর্তমান আরপিও আইনে গণভোট পরিচালনার বিধান নেই। সরকার শিগগিরই আইন বা অধ্যাদেশ জারি করবে বলে ইসির ধারণা।
এবারের সংসদ নির্বাচনে প্রবাসী বাংলাদেশিরা পোস্টাল ব্যালটে ভোট দিতে পারবেন। তবে তারা গণভোটে ভোট দিতে পারবেন কি না—এ বিষয়ে এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। ইসি এ সুযোগ দেওয়ার ব্যাপারে ইতিবাচক অবস্থানে আছে।
গণভোটে প্রবাসী ভোটের সুযোগ দিতে হলে নতুন আইনে এ–সংক্রান্ত আলাদা বিধান যোগ করতে হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। ইসি বর্তমানে ৪২,৭৬১টি ভোটকেন্দ্র ও ২,৪৪,৬৪৯টি ভোটকক্ষ চূড়ান্ত করেছে।
ইসির কর্মকর্তারা মনে করেন, জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতির মাধ্যমেই গণভোট আয়োজনের প্রস্তুতি প্রায় হয়ে যাচ্ছে। তবে একই দিনে দুটি ভোট গ্রহণ করতে হলে ভোটকক্ষ বা বুথ বাড়াতে হবে। কারণ ভোটারদের দুটি ব্যালটে ভোট দিতে সময় বেশি লাগবে।
বুথ বাড়লে ভোট গ্রহণ কর্মকর্তার সংখ্যাও বাড়ানো প্রয়োজন হবে। এছাড়া স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স, ব্যালট পেপারসহ কিছু অতিরিক্ত উপকরণও যোগ করতে হতে পারে।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, কোথায় বুথ বাড়ানো হবে বা ভোটকেন্দ্রে পরিবর্তন আসবে কি না—সেসব সিদ্ধান্ত সার্বিক পর্যালোচনার পর কমিশন নেবে। তবে গণভোট আয়োজনের প্রধান বাধা এখনো সরকারের আনুষ্ঠানিক নির্দেশনার অভাব।
ক্ষমতাসীন অন্তর্বর্তী সরকারের ঘোষণা সত্ত্বেও নির্দেশনা না আসায় গণভোটের প্রস্তুতি এখনও অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে।