নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের আলোচিত সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমান, তার স্ত্রী সালমা ওসমান, মেয়ে লাবিবা জোহা অঙ্গনা এবং ছেলে ইমতিনান ওসমানকে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করেছে।
সম্প্রতি দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে পাঠানো এক চিঠিতে তাদেরকে সোমবার, ১২ মে হাজির হতে বলা হয়েছে। নোটিশে সই করেছেন দুদকের উপপরিচালক রেজাউল করিম। এই অনুসন্ধানে আরও যুক্ত রয়েছেন সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম এবং পিয়াস পাল।
শামীম ওসমান ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে উত্থাপিত মূল অভিযোগসমূহ, সিন্ডিকেট করে টেন্ডার বাণিজ্য, বিভিন্ন খাতে চাঁদাবাজি ও কমিশন আদায়, জমি দখল ও প্রভাব খাটিয়ে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ, বিদেশে অবৈধ সম্পদ (যুক্তরাষ্ট্রে বাড়ি, দুবাইয়ে ব্যবসা), দলে পদ ও মনোনয়ন বাণিজ্য, পরিবহন খাতে দখলদারি ও চাঁদাবাজি, অবৈধভাবে ১৩টি জাহাজ মালিকানা ও জ্বালানি ব্যবসা।
এর আগে ১৫ জানুয়ারি, শামীম ওসমান, তার স্ত্রী সালমা ওসমান লিপি এবং শ্যালক তানভীর আহমেদের বিরুদ্ধে ১৯৩ কোটি ৯১ লাখ টাকার বিদেশে পাচার ও আত্মসাতের অভিযোগে মামলা দায়ের করে দুদক।
মামলায় বলা হয়, “আইজিডব্লিউ অপারেটর হিসেবে অর্জিত ১৯৩ কোটি টাকার মধ্যে ২ কোটি ৫১ লাখ মার্কিন ডলার বিদেশে পাচার করা হয়েছে, যা মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন লঙ্ঘন।”
১৯৯৬ সালে প্রথমবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার সময় শামীম ওসমানের উল্লেখযোগ্য সম্পদ ছিল না।
তবে সময়ের সঙ্গে তার সম্পদের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে:
সাল | সম্পদের ধরন | পরিমাণ |
---|---|---|
২০১৪ | কৃষি জমি | ১০ শতাংশ |
দোতলা বাড়ি ও উত্তরার জমি | ১৬ শতাংশ + ৯ কাঠা | |
বার্ষিক আয় | ২৭ লাখ টাকা | |
২০২৪ | কৃষি জমি | ১২৩ শতাংশ |
অকৃষি জমি ও প্লট | ১০ শতাংশ + পূর্বাচল প্লট | |
গাড়ি | ২টি ল্যান্ডক্রুজার | |
বার্ষিক আয় | ৭৯ লাখ টাকা |
শামীম ওসমানের মেয়ে লাবিবা জোহা অঙ্গনা কানাডার নাগরিক বলে জানা গেছে। তাদের বিরুদ্ধে দুবাই ও যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে।
শামীম ওসমান ১৯৯৬ সালে সংসদ সদস্য হন। ২০০১ সালে ক্ষমতা হারালে ভারত পালিয়ে যান। আওয়ামী লীগ ২০০৮ সালে ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালে দেশে ফিরে আসেন এবং এরপর কয়েকবার বিতর্কিত নির্বাচনের মাধ্যমে সংসদ সদস্য ছিলেন।
শামীম ওসমান ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে উত্থাপিত দুর্নীতি ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ এখন জাতীয় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। দুদকের জিজ্ঞাসাবাদ ও আইনি পদক্ষেপের ফলাফল সময়ই বলে দেবে এই প্রভাবশালী রাজনৈতিক পরিবারের ভবিষ্যৎ।