
জাতিসংঘের স্বাধীন প্রতিবেদনের হিসাব অনুযায়ী, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে গণঅভ্যুত্থানে প্রায় ১৪০০ মানুষ নিহত এবং হাজারো মানুষ আহত হন। এই হত্যাকাণ্ডের দায়ে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দেওয়ার অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের আদেশ চেয়েছেন প্রসিকিউটররা।
তবে এসব অভিযোগের বিষয়ে ক্ষমা চাইতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বুধবার ভারতের নয়াদিল্লিতে অবস্থানরত শেখ হাসিনার একটি সাক্ষাৎকার প্রকাশ করে রয়টার্স, এএফপি ও যুক্তরাজ্যের দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট। সাক্ষাৎকারে তিনি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলেন, এসব মামলা ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’।
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে কিছু অডিও প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়েছে, যেখানে তাকে গুলি চালানোর নির্দেশ দিতে শোনা যায়। তবে হাসিনা এএফপিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে দাবি করেন, অডিওর কথাগুলো ‘ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে’। তিনি বলেন, “আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ যে আমি নিজে বাহিনীকে গুলি চালাতে বলেছি, এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।”
তবে তিনি স্বীকার করেন, চেইন অব কমান্ডে কিছু ভুল হয়েছিল।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আগামী ১৩ নভেম্বর শেখ হাসিনার মামলার রায় ঘোষণার তারিখ জানাবে। শেখ হাসিনার দাবি, তাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের যথেষ্ট সময় দেওয়া হয়নি, যদিও তিনি আদালতে আত্মসমর্পণ বা আইনজীবী নিয়োগ করেননি।
রয়টার্সকে হাসিনা বলেন, “এটি একটি ক্যাঙ্গারু কোর্ট। আমাকে অপরাধী বানিয়ে রায় আগেই নির্ধারিত হয়েছে। মৃত্যুদণ্ড হলেও আমি অবাক হব না।”
দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্টকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “আমি নিহত প্রতিটি শিশু, ভাইবোন ও বন্ধুর জন্য শোক জানাই, তবে এজন্য ক্ষমা চাইব না।”
তার দাবি, সরকার উৎখাতের জন্য রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা চক্রান্ত করেছিল।
হাসিনা আরও বলেন, নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন করছে না এবং আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করছে।
তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগসহ প্রধান সব দলের অংশগ্রহণ ছাড়া নির্বাচন বিশ্বাসযোগ্য হবে না। কার্যকর রাজনৈতিক ব্যবস্থা চাইলে লাখ লাখ মানুষকে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করা যাবে না।”
রয়টার্সকে হাসিনা আরও বলেন, “আওয়ামী লীগের ওপর নিষেধাজ্ঞা অন্যায় ও আত্মঘাতী। পতনের কয়েকদিন আগে আমরা জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করেছিলাম।”
বর্তমানে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ, কারণ দলের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের তদন্ত চলছে। হাসিনার মতে, “এই পরিস্থিতিতে কোনো নির্বাচন হলে তা ভবিষ্যতের জন্য বিভেদের বীজ বপন করবে।”
ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম শেখ হাসিনাকে “সব অপরাধের কেন্দ্রবিন্দু” আখ্যা দিয়ে আদালতের কাছে তার মৃত্যুদণ্ডের দাবি করেছেন।
হাসিনা বলেন, তার এখন প্রধান অগ্রাধিকার বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা ও গণতান্ত্রিক শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠা। তিনি বর্তমানে দিল্লিতে শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান করছেন এবং মাঝে মাঝে লোধি গার্ডেনে হাঁটতে যান।
এএফপিকে হাসিনা বলেন, “বাংলাদেশের জনগণ যা চায়, তা দিতে হলে ড. ইউনূসকে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম পুনর্বহাল করতে হবে।”