আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে জুলাই-আগস্টের গণহত্যা সংক্রান্ত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় তদন্ত রিপোর্ট আগামী সোমবার (১২ মে) দাখিল করতে যাচ্ছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।
শুক্রবার (৯ মে) দুপুরে নিজের ফেসবুক পেজে দেয়া এক পোস্টে তাজুল ইসলাম জানান, “আশা করছি, তদন্ত সংস্থা আগামী সোমবার চিফ প্রসিকিউটরের দপ্তরে তদন্ত রিপোর্ট জমা দেবে। এর পরপরই আনুষ্ঠানিক অভিযোগপত্র বা ফরমাল চার্জ দাখিলের মাধ্যমে বিচারিক কার্যক্রম শুরু হবে ইনশাআল্লাহ।”
তিনি আরও জানান, চানখারপুল হত্যাকাণ্ডে জড়িত সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেও তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করা হয়েছে। চলতি সপ্তাহেই সেই মামলার আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হতে পারে।
গত ১৮ ফেব্রুয়ারি, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এই মামলার তদন্ত ২০ এপ্রিলের মধ্যে শেষ করতে নির্দেশ দেয়। তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল—যার নেতৃত্বে আছেন চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদার—এই আদেশ দেন। প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত চিফ প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম শুনানিতে অংশ নেন।
এর আগে, ২০২৪ সালের ১৭ ডিসেম্বর, দুইটি মামলায় শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদেরসহ ৪৬ জন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের তদন্তের নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।
২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমন করতে গিয়ে, শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন সরকার নিরস্ত্র ছাত্র ও সাধারণ জনগণের উপর নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করে। এই ঘটনায় প্রায় দেড় হাজার মানুষ নিহত হন, যা দেশের ইতিহাসে অন্যতম ভয়াবহ রাজনৈতিক গণহত্যা হিসেবে বিবেচিত।
এই হত্যাকাণ্ডের নির্দেশদাতা ও পরিকল্পনাকারী হিসেবে শেখ হাসিনা ও তার মন্ত্রিসভার সদস্যদের অভিযুক্ত করা হয়। আন্দোলনের মধ্যেই ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতন ঘটে। এরপর শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন হয়, যারা গণহত্যার বিচার শুরু করার ঘোষণা দেয়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হলে এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে নজিরবিহীন একটি অধ্যায় হবে। পাশাপাশি এটি দেশে মানবতাবিরোধী অপরাধের শাস্তির দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে।
১২ মে তদন্ত রিপোর্ট জমা পড়লে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও বিচারিক প্রেক্ষাপটে একটি বড় মোড় আসতে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের পদক্ষেপ ও জনগণের দাবির প্রতিফলনে ইতিহাসের একটি কলঙ্কিত অধ্যায়ের বিচার শুরু হতে যাচ্ছে।