
কক্সবাজারে এক বিশেষ অনুষ্ঠানে রোহিঙ্গাদের জন্য ৩ হাজার মেট্রিক টন সূর্যমুখী তেল হস্তান্তর করেছে বাংলাদেশ সরকার, ইউক্রেন ও সুইডেন। জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি)–এর সহযোগিতায় আয়োজিত এ উদ্যোগ বাস্তবায়িত হয়েছে ইউক্রেন সরকারের মানবিক কর্মসূচি ‘গ্রেইন ফ্রম ইউক্রেন’–এর আওতায়।
এই বিপুল তেলের চালান রোহিঙ্গা শিবিরে চলমান খাদ্য সহায়তা কার্যক্রমকে শক্তিশালী করতে ব্যবহৃত হবে। তেলগুলো উৎপাদিত হয়েছে ইউক্রেনে এবং এর ক্রয় ও পরিবহন ব্যয়—মোট ৭০ লাখ মার্কিন ডলার—ভার নিয়েছে সুইডেন সরকার। মানবিক সহায়তার ক্ষেত্রে এটি একটি উল্লেখযোগ্য আন্তর্জাতিক সহযোগিতা।
উখিয়ার মধুরছড়া লজিস্টিক হাবে আয়োজিত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মোস্তফিজুর রহমান, রোহিঙ্গা ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মিজানুর রহমান, সুইডেনের রাষ্ট্রদূত নিকোলাস উইকস, ইউক্রেনের রাষ্ট্রদূত ড. ওলেক্সান্দ্র পলিশচুক, ডব্লিউএফপি–এর ভারপ্রাপ্ত কান্ট্রি ডিরেক্টর সিমোন পার্চমেন্ট এবং ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূতসহ অন্যান্য অতিথিরা।
অনুষ্ঠানে সচিব মোস্তফিজুর রহমান বলেন, “সুইডেন ও ইউক্রেনের এই সহায়তা রোহিঙ্গাদের খাদ্য নিরাপত্তা জোরদার করবে। এটি মানবতা ও বৈশ্বিক সংহতির প্রতিফলন।”
রোহিঙ্গা ত্রাণ কমিশনার মিজানুর রহমান জানান, এই উদ্যোগ ইউক্রেন, সুইডেন, ফ্রান্স, ডব্লিউএফপি এবং বাংলাদেশ সরকারের যৌথ মানবিক বিশ্বাসকে সামনে নিয়ে এসেছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহিউদ্দিন কায়েস বলেন, এটি শুধু খাদ্য সহায়তা নয়—রোহিঙ্গাদের প্রতি আন্তর্জাতিক বন্ধুত্ব ও সংহতির প্রতীক।
অনুষ্ঠান শেষে অতিথিরা ডব্লিউএফপির খাদ্য বিতরণ কেন্দ্র পরিদর্শন করেন। রোহিঙ্গারা ই-ভাউচার ব্যবস্থার মাধ্যমে মাসে ১২ মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ খাদ্য সংগ্রহ করতে পারেন। তেলের পাশাপাশি তারা চাল, ডাল, তাজা শাকসবজি, মাছ, মুরগি ও স্থানীয় কৃষকদের সরবরাহকৃত পণ্য কেনেন। এতে শিবিরের খাদ্য নিরাপত্তা যেমন বাড়ছে, তেমনি স্থানীয় কৃষকরাও অর্থনৈতিকভাবে উপকৃত হচ্ছেন।
ইউক্রেনের রাষ্ট্রদূত ড. পলিশচুক বলেন, “বাংলাদেশের নেতৃত্ব প্রশংসনীয়। মানবতার পক্ষ নিয়ে কাজ করায় সুইডেনসহ সব অংশীদারকে ধন্যবাদ।”
সুইডেনের রাষ্ট্রদূত নিকোলাস উইকস জানান, রোহিঙ্গা সংকট দীর্ঘমেয়াদি হওয়ায় বিশ্বকে আরও সচেতন হতে হবে। ডব্লিউএফপির সিমোন পার্চমেন্ট বলেন, এই সহায়তা বৈশ্বিক সংহতির একটি শক্তিশালী উদাহরণ এবং আরও দেশকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
এখন নবম বছরে গড়িয়েছে রোহিঙ্গা সংকট। তহবিল সংকট বৃদ্ধি পাওয়ায় ২০২৬ সালে ডব্লিউএফপির প্রয়োজনীয় বাজেট থেকে ১৭২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ঘাটতি দেখা দিয়েছে। নতুন অর্থায়ন না পেলে আগামী এপ্রিল থেকেই খাদ্য সহায়তা বড় সংকটে পড়তে পারে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সংস্থাটি।