এ অধ্যাদেশের মাধ্যমে বিচার প্রশাসন পরিচালনার জন্য সুপ্রিম কোর্টের অধীনে একটি স্বতন্ত্র সচিবালয় প্রতিষ্ঠা পেল, যা দীর্ঘদিনের দাবি ও বিচার বিভাগের স্বাতন্ত্র্যবিধানের অন্যতম প্রধান স্তম্ভ হিসেবে বিবেচিত।
এর আগে গত ২০ নভেম্বর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় গঠনের খসড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়। কিন্তু এই উদ্যোগের সূচনা আরও আগে—২০২৪ সালের ২৭ অক্টোবর প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে সুপ্রিম কোর্ট থেকে পৃথক বিচার বিভাগীয় সচিবালয় প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব পাঠানো হয় আইন মন্ত্রণালয়ে।
উক্ত প্রস্তাবে হাইকোর্ট বিভাগের অধস্তন আদালত ও ট্রাইব্যুনালের তত্ত্বাবধান যথাযথভাবে পরিচালনার জন্য একটি স্বাধীন সচিবালয় প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা হয়। সেই সঙ্গে অর্গানোগ্রাম, রুলস অব বিজনেস এবং অ্যালোকেশন অব বিজনেস-এর সংশোধন সম্পর্কেও বিস্তারিত প্রস্তাব প্রদান করা হয়।
এই অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে বিচার বিভাগের প্রশাসনিক স্বাধীনতা আজ বাস্তব রূপ পেল।
২০২৪ সালের ২ সেপ্টেম্বর একটি গুরুত্বপূর্ণ রায়ে হাইকোর্ট সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদের সংশোধনী বাতিল ঘোষণা করে এবং বাহাত্তরের সংবিধানের মূল রূপে পুনর্বহালের নির্দেশ দেয়। বিচারপতি আহমেদ সোহেল এবং বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর বেঞ্চ জানায়— অধস্তন বিচারকদের নিয়ন্ত্রণ, বদলি, শৃঙ্খলা, পদোন্নতি ও ছুটির ক্ষমতা সুপ্রিম কোর্টের হাতে ফিরিয়ে দিতে হবে।
রায়ে আরও বলা হয়, সুপ্রিম কোর্টের প্রস্তাবনা অনুসারে তিন মাসের মধ্যে পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
সেই আদেশের পরিপ্রেক্ষিতেই আজ এই স্বপ্ন পূরণ হলো।
সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় অধ্যাদেশ, ২০২৫ কার্যকর হওয়ার ফলে—
-
বিচার বিভাগ আর নির্বাহী বিভাগের অধীন থাকছে না,
-
বিচারকদের নিয়ন্ত্রণ ও তত্ত্বাবধান এখন সম্পূর্ণ সুপ্রিম কোর্টের অধীন,
-
বিচার ব্যবস্থার স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও কার্যকারিতা বাড়বে,
-
সংবিধানের ১০৯ ও ১১৬ অনুচ্ছেদের উদ্দেশ্য সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়নের পথ সুগম হবে।
আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি বাংলাদেশের বিচার বিভাগে ইতিহাস সৃষ্টি করা এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ।