বাংলাদেশ পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (অতিরিক্ত আইজি) পদমর্যাদার আরও তিন কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আজ বুধবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পৃথক তিনটি প্রজ্ঞাপনে এই ঘোষণা দেওয়া হয়। এদের মধ্যে রয়েছেন পুলিশ স্টাফ কলেজের রেক্টর মল্লিক ফখরুল ইসলাম, পুলিশ টেলিকমের প্রধান ওয়াই এম বেলালুর রহমান এবং পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত আইজি সেলিম মো. জাহাঙ্গীর। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব নাসিমুল গনি রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে এ সিদ্ধান্তে স্বাক্ষর করেছেন। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ (২০১৮ সালের ৫৭ নং আইন) এর ৪৫ ধারার বিধান অনুসারে জনস্বার্থে তাদের সরকারি চাকরি থেকে অবসর দেওয়া হচ্ছে। তারা বিধি অনুযায়ী অবসরজনিত সুবিধা প্রাপ্য হবেন এবং এই আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে।
এ সিদ্ধান্তের মাধ্যমে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর পুলিশের অন্তত ১৭ জন অতিরিক্ত আইজিকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হলো। এর আগেও একাধিক পুলিশ কর্মকর্তাকে অবসরে পাঠানো হয়েছিল, যার মধ্যে গত ২ ডিসেম্বর ৯ জন কর্মকর্তা ছিলেন। এদের মধ্যে সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার মো. সেলিম হোসেন, বরিশাল মহানগর পুলিশের (বিএমপি) সহকারী পুলিশ কমিশনার এম আর শওকত আনোয়ার ইসলাম, র্যাবের সহকারী পুলিশ সুপার মো. নাসির উদ্দিন ভূঁঞা, সহকারী পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান, সহকারী পুলিশ সুপার মো. জামাল উদ্দিন, এপিবিএনের সহকারী পুলিশ সুপার মো. মতিউর রহমান, সহকারী পুলিশ সুপার জোবাইরুল হক, এসএএফের সহকারী পুলিশ সুপার মো. এনায়েত হোসেন এবং শিল্পাঞ্চল পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার মো. মোশাররফ হোসেন উল্লেখযোগ্য। এর আগে গত ৮ অক্টোবরও বেশ কিছু উচ্চপদস্থ পুলিশ কর্মকর্তা, যেমন র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক ও পুলিশের অতিরিক্ত আইজি মো. হারুন অর রশিদ, হাইওয়ে পুলিশের অতিরিক্ত আইজি শাহাবুদ্দিন খান এবং ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক অতিরিক্ত কমিশনার খন্দকার মহিদ উদ্দিনকে অবসরে পাঠানো হয়েছিল।
পুলিশ বাহিনীর একাধিক কর্মকর্তা একের পর এক বাধ্যতামূলক অবসরে যাওয়ার ফলে প্রশাসনিক স্তরে ব্যাপক পরিবর্তন আসছে। ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ সালে রেলওয়ে পুলিশে কর্মরত অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক দেবদাস ভট্টাচার্য, ঢাকায় সংযুক্ত শিল্পাঞ্চল পুলিশের উপপুলিশ মহাপরিদর্শক এ কে এম হাফিজ আক্তার, পুলিশের টেলিকমের উপপুলিশ মহাপরিদর্শক বশির আহমদ এবং ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারী পুলিশ কমিশনার দাদন ফকিরকেও অবসরে পাঠানো হয়। এর আগে ২ সেপ্টেম্বর পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক খন্দকার লুৎফুল কবির, ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মীর রেজাউল আলম, নোয়াখালী পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারের অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক চৌধুরী মঞ্জুরুল কবির এবং সিআইডির উপমহাপরিদর্শক (চলতি দায়িত্বে) ইমাম হোসেনকে অবসরে পাঠানো হয়েছিল।
এছাড়া, গত আগস্ট মাসেও পুলিশের বেশ কিছু অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক ও উপমহাপরিদর্শককে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়। ২২ আগস্ট পুলিশ সদর দপ্তরের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) জয়দেব কুমার ভদ্র, অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মোহাম্মদ আলী মিয়া এবং শিল্পাঞ্চল পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মো. মাহাবুবর রহমান অবসরে যান। এর এক সপ্তাহ আগে, ১৩ আগস্ট সিআইডি থেকে মোহাম্মদ আলী মিয়াকে পুলিশ সদর দপ্তরে সংযুক্ত করা হয়েছিল এবং একই দিন পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মনিরুল ইসলাম ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার হাবিবুর রহমানকে চাকরি থেকে অবসরে পাঠানো হয়।
এভাবে পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের একের পর এক অবসর প্রক্রিয়া চলমান থাকলেও, সরকার এসব কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কোনো বিশেষ দুর্নীতির অভিযোগ আনছে না। বরং তারা এই সিদ্ধান্তকে জনস্বার্থে নেওয়া বলে দাবি করছে, যা সরকার এবং পুলিশের উর্ধ্বতন মহলের মধ্যে এক নতুন মাত্রা এবং প্রশাসনিক পরিবর্তনের ইঙ্গিত বহন করছে।