রাঙামাটির সাজেক পর্যটন কেন্দ্রে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। সোমবার দুপুরে লাগা এই আগুনে অন্তত ৯৪টি রিসোর্ট, দোকান, রেস্তোরাঁ ও বসতঘর সম্পূর্ণভাবে পুড়ে গেছে। আগুনের তীব্রতা এতটাই প্রবল ছিল যে, প্রায় পাঁচ ঘণ্টার প্রচেষ্টায় ফায়ার সার্ভিস আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। দুর্গম এলাকা হওয়ায় ফায়ার সার্ভিসের দল সাজেকে পৌঁছতে বিলম্ব হয়।
আগুনের সূত্রপাত কীভাবে হয়েছে, তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে স্থানীয় সূত্র ও প্রশাসনের ধারণা, রান্নাঘরের গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ, শর্টসার্কিট বা সিগারেটের আগুন থেকে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হতে পারে।
অগ্নিকাণ্ডে কোনো প্রাণহানি না হলেও রিসোর্ট ও রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ীদের বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির নির্দিষ্ট পরিমাণ তাৎক্ষণিকভাবে নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি। ঘটনায় পর্যটকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে এবং তাদের নিরাপদে খাগড়াছড়িতে সরিয়ে নেওয়া হয়।
স্থানীয় সূত্র জানায়, বাঘাইছড়ির সাজেক ইউনিয়নের ইকো ভ্যালি রিসোর্ট থেকে প্রথমে আগুনের লেলিহান শিখা দেখা যায়, যা দ্রুত অন্যান্য রিসোর্ট, দোকান ও বসতঘরে ছড়িয়ে পড়ে। আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে সেনাবাহিনী, পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দারা আগুন নেভানোর চেষ্টা করলেও সফল হতে পারেননি।
বাঘাইছড়িতে ফায়ার সার্ভিস না থাকায়, খবর পেয়ে খাগড়াছড়ি সদর, পানছড়ি ও দীঘিনালা থেকে ১১টি ফায়ার সার্ভিস ইউনিট রওনা দেয়। তবে দুর্গম পথের কারণে সাজেকে পৌঁছতে তাদের প্রায় আড়াই ঘণ্টা সময় লেগে যায়। বিকেল ৫টার দিকে আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসে।
সাজেক রিসোর্ট-কটেজ মালিক সমিতির সভাপতি সুবর্ণ দেব বর্মণ জানান, আগুনে ৩২টি রিসোর্ট, ৩৫টি বসতঘর, ২০টি দোকান ও ৭টি রেস্তোরাঁ সম্পূর্ণরূপে পুড়ে গেছে এবং কোনো মালপত্র রক্ষা করা সম্ভব হয়নি।
জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার ইমতিয়াশ ইয়াসিন এক প্রেস ব্রিফিংয়ে জানান, শর্টসার্কিটের মাধ্যমে আগুনের সূত্রপাত হয় এবং এতে পর্যটন কেন্দ্রের একটি বড় অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
খাগড়াছড়ি ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপপরিচালক মোহাম্মদ জাকের হোসেন জানান, বিকেল ৫টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে এলেও পুনরায় যেন আগুন ছড়িয়ে না পড়ে, সে জন্য আশপাশে পানি ছিটানো হয়। সাজেক পর্যটন কেন্দ্র পাহাড়ের ওপর হওয়ায় পানি সরবরাহে সমস্যা হয়েছে।
বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিরিন আক্তার ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিব উল্লাহ জানান, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা দেওয়া হবে এবং সাময়িকভাবে পর্যটকদের সাজেকে প্রবেশ বন্ধ রাখার অনুরোধ করা হয়েছে।