সিরাজদিখান উপজেলার ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কের রামের খোলা ফ্লাইওভারের নিচ থেকে অজ্ঞাতপরিচয় এক নারীর গলিত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। শনিবার (১১ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সিরাজদিখান থানা পুলিশ লাশটি উদ্ধার করে।
এলাকাবাসীর কাছ থেকে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশটি উদ্ধার করে। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ ধারণা করছে, কয়েকদিন আগে ওই নারীকে হত্যার পর ফ্লাইওভারের নিচে ফেলে রাখা হয়েছে।
সিরাজদিখান থানার উপ-পরিদর্শক নোমান সিদ্দিকি এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, “আমরা এলাকাবাসীর কাছ থেকে খবর পেয়ে রামের খোলা ফ্লাইওভারের নিচ থেকে লাশটি উদ্ধার করেছি। নিহত নারীর বয়স আনুমানিক ২৫ থেকে ৩০ বছর। তার শরীরে কোনো পোশাক ছিল না।”
তিনি আরও বলেন, “ধারণা করছি, দুর্বৃত্তরা তাকে কয়েকদিন আগে হত্যা করে এখানে ফেলে রেখে গেছে। তবে এই মুহূর্তে বিস্তারিত কিছু বলা যাচ্ছে না।”
নোমান সিদ্দিকি জানান, “আমরা লাশের পরিচয় শনাক্তের জন্য পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (পিবিআই)-এর সহায়তা নেব। পিবিআই’র সাহায্যে ডিএনএ পরীক্ষা এবং পরিচয় শনাক্তকরণে কাজ করা হবে। পরিচয় শনাক্ত হলে পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”
এ ঘটনায় সিরাজদিখান উপজেলায় ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, কয়েকদিন ধরেই ফ্লাইওভারের নিচে দুর্গন্ধ পাওয়া যাচ্ছিল। প্রথমে বিষয়টি নিয়ে কেউ সাহস না করলেও পরে পুলিশকে খবর দেওয়া হয়।
স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, “ফ্লাইওভারের নিচে কিছু অস্বাভাবিক দুর্গন্ধ পাওয়া যাচ্ছিল। প্রথমে আমরা ভেবেছিলাম কোনো প্রাণীর মৃতদেহ। কিন্তু পরে বুঝতে পারি বিষয়টি ভিন্ন। এরপর পুলিশকে জানাই।”
পুলিশের প্রাথমিক ধারণা, ওই নারীকে হত্যার পর তার পরিচয় গোপন করার উদ্দেশ্যে ফ্লাইওভারের নিচে ফেলে রাখা হয়েছে। লাশটি গলিত অবস্থায় পাওয়ায় মৃত্যুর সঠিক সময় নির্ধারণ করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
নোমান সিদ্দিকি বলেন, “এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড হতে পারে। হত্যাকারীরা লাশ গুম করার উদ্দেশ্যে এখানে ফেলে গেছে বলে মনে হচ্ছে। তবে তদন্তের মাধ্যমে সঠিক তথ্য উদঘাটন করা হবে।”
উদ্ধার হওয়া লাশটি ময়নাতদন্তের জন্য মুন্সীগঞ্জ জেলা হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
সিরাজদিখান থানার উপ-পরিদর্শক আরও জানান, “ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পাওয়ার পর মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যাবে। এছাড়া লাশের পরিচয় শনাক্তের জন্য আমরা পিবিআই এবং সিআইডি’র সহায়তা নিচ্ছি। পরিচয় শনাক্ত হলে নিহতের পরিবারকে অবহিত করা হবে এবং পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এই ঘটনায় এলাকাবাসীর মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। তারা দ্রুত অপরাধীদের শনাক্ত করে কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, “আমরা এই ধরনের ঘটনা এলাকায় আগে কখনো দেখিনি। পুলিশ যেন দ্রুত তদন্ত করে অপরাধীদের গ্রেপ্তার করে। আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।”
পুলিশ জানায়, এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের ধরতে ইতোমধ্যেই তদন্ত কার্যক্রম শুরু হয়েছে। বিভিন্ন সিসিটিভি ফুটেজ এবং স্থানীয় সূত্র থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।
নোমান সিদ্দিকি বলেন, “আমরা বিষয়টি খুব গুরুত্বসহকারে দেখছি। দ্রুত তদন্ত করে দোষীদের শনাক্ত করা হবে।”
ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কের ফ্লাইওভারের নিচে অজ্ঞাত নারীর লাশ উদ্ধারের ঘটনায় পুরো সিরাজদিখান এলাকায় উদ্বেগ এবং আতঙ্ক বিরাজ করছে। পুলিশ দ্রুত অপরাধীদের গ্রেপ্তার করে বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য তৎপর রয়েছে। লাশের পরিচয় শনাক্ত এবং ময়নাতদন্ত রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর তদন্ত আরও এগিয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।