দীর্ঘ অর্ধযুগেরও বেশি সময় পর উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে যাচ্ছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) রাতে যুক্তরাজ্যের লন্ডন উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করবেন তিনি। তার এই সফর ঘিরে বিএনপি নেতাকর্মী, সমর্থকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ তাকে বিদায়ী শুভেচ্ছা জানাতে গুলশানের বাসভবন ফিরোজা থেকে বিমানবন্দর সড়কে জড়ো হয়েছেন। সবাই আশা করছেন, বেগম জিয়া দ্রুত সুস্থ হয়ে দেশের রাজনীতিতে ফিরে আসবেন।
মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) রাত ৮টায় গুলশানের বাসা ফিরোজা থেকে বিমানবন্দরের উদ্দেশ্যে রওনা হবেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। বিমানবন্দরে পৌঁছে ইমিগ্রেশনের আনুষ্ঠানিকতা শেষে রাত ১০টায় লন্ডনের উদ্দেশ্যে যাত্রা করবেন।
লন্ডন যাত্রাপথে কাতারের দোহায় যাত্রাবিরতির সময় কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির সঙ্গে বেগম জিয়ার সাক্ষাৎ করার কথা রয়েছে।
২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি, দুর্নীতির এক মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়ে বেগম খালেদা জিয়া কারাবন্দি হন। তাকে রাখা হয় ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের পরিত্যক্ত ও নির্জন কারাগারে। কারাগারে থাকাকালে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হন তিনি এবং বারবার তাকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়।
আদালতের বিভিন্ন দ্বারে ঘুরেও জামিন ও মুক্তি না পাওয়ায় পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রাণঘাতী করোনা মহামারির সময়, আওয়ামী লীগ সরকার তাকে শর্তসাপেক্ষে ছয় মাসের জন্য মুক্তি দেয়। সেই মুক্তির মেয়াদ পর্যায়ক্রমে ছয় মাস করে বাড়ানো হয়।
মুক্তি পেলেও বেগম খালেদা জিয়ার জীবন সীমাবদ্ধ ছিল বাসা ও হাসপাতালের মধ্যে। কয়েকবার গুরুতর অসুস্থ হয়ে দীর্ঘ সময় হাসপাতালে ভর্তি থাকতে হয় তাকে। বিএনপি নেত্রীর জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে বিদেশ থেকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এনে তাকে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর কয়েকবার তার লন্ডন যাত্রার তারিখ পরিবর্তন করা হয়। তবে বর্তমানে শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল থাকায় কাতারের আমিরের পাঠানো বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে তিনি লন্ডন যাচ্ছেন। এই এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে রয়েছে আইসিইউ সুবিধাসহ তাৎক্ষণিক জীবনরক্ষার সব ধরনের সরঞ্জাম।
লন্ডনে যাওয়ার আগে দেশবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন বেগম খালেদা জিয়া। তিনি সবার কাছে তার সুস্থতার জন্য দোয়া চেয়েছেন। চার বছর গৃহবন্দি থাকা অবস্থায় দেশের মানুষ তাকে যেভাবে সমর্থন দিয়েছেন, সেজন্য তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
বেগম জিয়ার লন্ডন যাত্রার দিন সকাল থেকেই বিএনপির নেতাকর্মীরা গুলশান ফিরোজার সামনে থেকে বিমানবন্দর সড়ক পর্যন্ত ভিড় করতে থাকেন। সবার মধ্যে তাকে বিদায় জানানোর আবেগ লক্ষ্য করা যায়। তারা বলছেন, বেগম জিয়া সুস্থ হয়ে ফিরে এসে দেশের রাজনীতিতে আবার সক্রিয় ভূমিকা পালন করবেন।
বিএনপির নেতারা মনে করছেন, বেগম জিয়ার বিদেশ যাত্রা দলের জন্য নতুন আশার আলো। দেশের চলমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে তার ফিরে আসা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে তারা বিশ্বাস করেন।
বেগম খালেদা জিয়ার যাত্রার জন্য ব্যবহৃত বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে রয়েছে আইসিইউ সুবিধা। যেকোনো জরুরি অবস্থায় তাৎক্ষণিক চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় সব সরঞ্জামও রয়েছে এতে। পাশাপাশি বেগম জিয়ার সঙ্গে রয়েছেন তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক দল এবং পরিবারের সদস্যরা।
বেগম খালেদা জিয়ার এই লন্ডন সফরের মূল উদ্দেশ্য উন্নত চিকিৎসা। চিকিৎসকরা বলেছেন, তার লিভার সিরোসিস, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিসসহ বেশ কয়েকটি জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার কারাবাসের সময়কাল
তারিখ | ঘটনা | সময়কাল |
---|---|---|
৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ | দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত হয়ে কারাবন্দি | ২ বছর ১ মাস ১৩ দিন |
মার্চ ২০২০ | করোনা মহামারির সময় শর্তসাপেক্ষে মুক্তি | ছয় মাসের জন্য মুক্তি |
২০২০ থেকে ২০২৩ | মুক্তির মেয়াদ ছয় মাস করে বাড়ানো | মোট ৪ বছর |
বিমানবন্দরে যাওয়ার পথে সাংবাদিকদের উদ্দেশে বেগম জিয়া বলেন, “দেশবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞ। সবার কাছে দোয়া চাই, যেন সুস্থ হয়ে আবারও দেশের মানুষের সেবা করতে পারি।”
বেগম খালেদা জিয়ার লন্ডন সফর শুধু চিকিৎসার জন্য নয়, রাজনৈতিকভাবেও তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। বিএনপির নেতাকর্মীরা আশা করছেন, তিনি সুস্থ হয়ে ফিরে এসে দেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দেবেন এবং আবারও সক্রিয় ভূমিকা পালন করবেন।