শিল্প খাতে গ্যাসের দাম নতুন করে আড়াই গুণ বাড়ানোর প্রস্তাবে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ স্টিল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএসএমএ)। সংগঠনটি জানিয়েছে, গ্যাসের দাম বাড়ানো হলে স্থানীয় ইস্পাত শিল্প ধ্বংসের মুখে পড়বে এবং দেশীয় অবকাঠামো উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হবে।
বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) বিএসএমএর সভাপতি মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব কার্যকর হলে দেশের রড ও এমএস পণ্যের উৎপাদন ব্যাহত হবে এবং পণ্যের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাবে।
বিএসএমএর সভাপতি মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে দেশের উদীয়মান ইস্পাত খাতের প্রতিষ্ঠানগুলো টিকে থাকতে পারবে না। স্থানীয় উৎপাদনকারীরা বন্ধ হয়ে গেলে দেশীয় বাজার আমদানিনির্ভর হয়ে পড়বে, যা বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর বড় চাপ সৃষ্টি করবে।
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের সদস্য প্রতিষ্ঠানগুলোর উৎপাদন পুরোপুরি গ্যাসনির্ভর। গ্যাসের দাম বাড়লে উৎপাদন খরচ ব্যাপকভাবে বাড়বে। ফলে রডসহ অন্যান্য ইস্পাত পণ্যের মূল্যও বাড়বে। এতে অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পগুলো বাধাগ্রস্ত হবে।’
বিএসএমএর বিজ্ঞপ্তিতে আরও উল্লেখ করা হয়, গত দুই বছর ধরে শিল্প খাতে গ্যাসের দাম ধাপে ধাপে বাড়ানো হয়েছে। দুই বছর আগে শিল্প খাতের জন্য গ্যাসের দাম ১৫০ থেকে ১৭৮ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়। এরপরও শিল্পে গ্যাসের সংকট কাটেনি।
সরকার এবার শিল্পে গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে আবারও আড়াই গুণ দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে। তবে বিএসএমএর দাবি, দাম বাড়ালেও নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করা হয়নি।
গত সোমবার বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা) গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব জমা দিয়েছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) কাছে। প্রস্তাবে বলা হয়েছে, প্রতি ইউনিট গ্যাসের দাম ৩০ টাকা ৭৫ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৭৫ টাকা ৭২ পয়সা করা হবে।
নতুন সংযোগের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত পুরো গ্যাসের বিল এই নতুন দামে হবে। তবে পুরোনো গ্রাহকদের ক্ষেত্রে কিছুটা ছাড় দেওয়া হতে পারে।
শিল্পকারখানাগুলোতে মূলত দুই ধরনের গ্যাস-সংযোগ রয়েছে। বয়লার চালানোর জন্য সাধারণ সংযোগ, কারখানার নিজস্ব বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ক্যাপটিভ সংযোগ।
উভয় সংযোগের ক্ষেত্রে ইউনিটপ্রতি গ্যাসের দাম বর্তমানে একই। তবে নতুন প্রস্তাবে পুরোনো গ্রাহকদের অনুমোদিত লোডের অতিরিক্ত ব্যবহৃত গ্যাসের জন্য নতুন দামে বিল দিতে হবে।
নতুন গ্রাহকদের ক্ষেত্রে অনুমোদিত লোডের ৫০ শতাংশ পর্যন্ত আগের দাম বজায় থাকবে। বাকি অংশের জন্য নতুন দামে বিল দিতে হবে।
বিএসএমএর সভাপতি বলেন, ‘দেশের ইস্পাতশিল্প ধীরে ধীরে উন্নতির দিকে যাচ্ছে। কিন্তু গ্যাসের দাম বাড়ানো হলে উদ্যোক্তারা এই খাতে বিনিয়োগে আগ্রহ হারাবেন। এতে শুধু ইস্পাতশিল্প নয়, সামগ্রিক শিল্পখাতেই নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।’
তিনি বলেন, ‘বিদ্যুৎ-সংক্রান্ত প্রশ্ন নিয়ে আমরা সরকারের সঙ্গে আলোচনা করব এবং বাস্তবসম্মত সমাধান চাইব। স্থানীয় শিল্পের সুরক্ষায় গ্যাসের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখা জরুরি।’