চাঁদপুরের মেঘনায় একটি সারবাহী জাহাজে সাতজনের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের লাশ নিতে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের সামনে স্বজনদের ভিড় জমেছে। নিহতদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের পরিবার হাসপাতালে এসে অপেক্ষা করলেও, ময়নাতদন্ত সম্পন্ন না হওয়ায় তাদের লাশ গ্রহণ করতে পারছেন না।
চাঁদপুরের মেঘনায় সোমবার রাতে এমভি আল-বাখেরা নামক জাহাজে সাতজন শ্রমিককে হত্যার খবর পাওয়া যায়। নিহতদের মধ্যে জাহাজের লস্কর শেখ সবুজ (২৭), মাস্টার গোলাম কিবরিয়া (৬৫), ইঞ্জিনচালক সালাউদ্দিন মোল্লা (৪০), ও অন্যান্য শ্রমিকরা অন্তর্ভুক্ত। মৃতদেহগুলো হাসপাতালে আনার পর, সোমবার রাতে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়। তবে, ময়নাতদন্ত না হওয়ায় মঙ্গলবার সকাল থেকে নিহতদের স্বজনরা হাসপাতালে ভিড় জমিয়ে লাশ নিতে এসেছেন।
নিহত শেখ সবুজের ছোট ভাই ও গোলাম কিবরিয়ার ভাগ্নে ফরিদপুরের সাদিকুর রহমান বলেন, “আমরা মনে করছি, এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। সকলেই একই ধরনের আঘাতে নিহত হয়েছেন, তাই এটি কোন সাধারণ ঘটনা নয়।” একই রকম মত প্রকাশ করেছেন নিহত সালাউদ্দিন মোল্লার চাচাতো ভাই ও জাহাঙ্গীর আলম, যারা মনে করছেন, এটি কোনো ডাকাতির ঘটনা নয়, বরং পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড হতে পারে। তারা আরও অভিযোগ করেছেন, চাঁদপুরের নৌ রুটে চাঁদাবাজির ব্যাপক প্রভাব রয়েছে, এবং হয়তো সেই চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িতরাই এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।
এদিকে, মাগুরার মোহম্মদপুর এলাকার নিহত মাজেদুল ইসলামের বাবা আনিসুর রহমান সন্তানের লাশ দেখে মাটিতে গড়াগড়ি করছেন এবং চিৎকার করছেন। স্বজনরা দাবি করছেন, নিহতদের মধ্যে একমাত্র বেঁচে থাকা ফরিদপুরের জুয়েল (৩৫) জানাতে পারবেন, কীভাবে এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে এবং কারা এর সঙ্গে জড়িত।
চাঁদপুর নৌ পুলিশ সুপার সৈয়দ মুশফিকুর রহমান জানিয়েছেন, “এখনও পর্যন্ত এ ঘটনায় মামলা হয়নি, তবে প্রক্রিয়া চলছে। জেলা প্রশাসন, জেলা পুলিশ, নৌ পুলিশ পৃথকভাবে তদন্ত অব্যাহত রেখেছে। ময়নাতদন্ত শেষে দুপুরের মধ্যে লাশগুলো তাদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হবে।”
এদিকে, শিল্প মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আলমগীর হোসেন জানিয়েছেন, “এমভি আল-বাখেরা জাহাজে সাত খুনের ঘটনায় শিল্প মন্ত্রণালয় একটি চার সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিবকে আহ্বায়ক ও যুগ্ম সচিবকে সদস্যসচিব করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।”
চাঁদপুরের মেঘনায় সারবাহী জাহাজে সাতজনের হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। নিহতদের পরিবারের সদস্যরা প্রশাসনের কাছে সুষ্ঠু তদন্ত ও দ্রুত বিচার দাবি করছেন। প্রশাসন, পুলিশ এবং শিল্প মন্ত্রণালয় এই ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে, কিন্তু তদন্তের ফলাফল কি হতে পারে, তা এখনই বলা যাচ্ছে না। তবে, নিহতদের পরিবার এবং স্থানীয় জনগণের মধ্যে ক্ষোভ ও শঙ্কা রয়েছে এবং তারা এ ঘটনার সুষ্ঠু সমাধান চাচ্ছেন।