যশোরের চৌগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) পায়েল হোসেনকে মাত্র দেড় মাসের মধ্যেই দায়িত্ব থেকে সরিয়ে পুলিশ লাইনসে ক্লোজড করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে উঠেছে বিভিন্ন গুরুতর অভিযোগ, যার মধ্যে রয়েছে টর্চার সেল পরিচালনা, ঘুষ ও রিমান্ড বাণিজ্য, চাঁদাবাজি, ভয়ভীতি প্রদর্শন, নিরীহ মানুষকে হয়রানি এবং নারী কেলেঙ্কারি।
রোববার (২৯ ডিসেম্বর) তাকে চৌগাছা থেকে যশোর পুলিশ লাইনসে ক্লোজড করা হয়। যশোরের পুলিশ সুপার জিয়াউদ্দিন আহমেদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, পায়েলের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগের ভিত্তিতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটি আগামী পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে রিপোর্ট জমা দেওয়ার জন্য নির্দেশিত হয়েছে।
পায়েল হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে যে তিনি চৌগাছা থানার ওসির দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে টাকার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠেন। জানা গেছে, তিনি পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে ৪০ লক্ষ টাকা ঘুষ দিয়ে ওসির চেয়ারে বসেছেন। প্রথম অভিযানে তিনি চৌগাছা বাস মালিক সমিতির সভাপতি জসিম উদ্দিনের বাড়ি সারারাত অবরুদ্ধ করেন এবং এক কোটি টাকা দাবি করেন। চাঁদা না দেওয়ায় তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন মামলা দায়ের করা হয়।
এছাড়া, উপজেলার ভাদড়া গ্রামের বিএনপি নেতা ব্যবসায়ী মানিক হোসেনকে থানায় এনে নির্যাতন করে পাঁচ লাখ টাকা দাবি করেন এবং সেটা আদায় করেন। একইভাবে, মাসিলা গ্রামের পারভেজ আহমেদ সোহাগ নামে এক যুবককে টর্চার সেলে আটকে রেখে দুই লাখ টাকা দাবি করেন এবং শারীরিক নির্যাতন চালান।
অপর একটি ঘটনায়, ২৩ নভেম্বর সিংহঝুলি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হামিদ মল্লিককে গ্রেপ্তার করে টর্চার সেলে ছয় ঘণ্টা আটকে রেখে ১০ লাখ টাকা দাবি করেন। টাকা না পাওয়ায় তাকে ২০১৯ সালের একটি চাঁদাবাজির মামলায় আদালতে পাঠানো হয়।
এছাড়া, ১৭ ডিসেম্বর এক ব্যবসায়ী জীবন হোসেন লিপুর বিরুদ্ধে দুটি চ্যালেঞ্জিং ঘটনা ঘটে। তার এক বন্ধুর ছোটভাই হারিয়ে গেলে ওসি তাকে নরসিংদি থেকে আনতে টাকা দাবি করেন। নিরুপায় হয়ে, ব্যবসায়ী ৫০ হাজার টাকা ওসির হাতে তুলে দেন। এরপর টাকা ফেরত চাইলে ওসি তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন এবং তাদের ছবি ও ফোন নম্বর পোস্টার আকারে থানায় সেঁটে দেন।
এদিকে, এক সপ্তাহ আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে, যাতে দেখা যায়, ওসি পায়েল অশালীন আচরণ করছেন এবং এক নারীকে অশালীন ইঙ্গিত দিচ্ছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে তাকে দেড় মাসের মাথায় ক্লোজড করা হয়।
অভিযোগের বিষয়ে ওসি পায়েল হোসেন বলেন, “আমাকে ট্র্যাপে ফেলা হয়েছে। আমি ষড়যন্ত্রের শিকার।” তবে তার বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে এবং বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।