অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর গেল পাঁচ মাসে (জুলাই থেকে নভেম্বর) দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরে আসলেও তা বাংলাদেশ ব্যাংক (বিবি)-এর প্রত্যাশা অনুযায়ী হয়নি। অর্থনৈতিক খাতের বিপদ ও ঝুঁকি অনেকটাই কেটে গেলেও পূর্ণ স্থিতিশীলতা এখনো অর্জিত হয়নি বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র হুসনে আরা শিখা।
মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) বাংলাদেশ ব্যাংকের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে হুসনে আরা শিখা বলেন, “সুখবর হলো অর্থনৈতিক ক্ষতি এরই মধ্যে অনেকটা কমে গেছে। ঝুঁকিও কেটে গেছে। গত পাঁচ মাসে আমরা বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছি। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো পুনর্গঠন, একটি ব্যাংকিং টাস্কফোর্স গঠন, বৈদেশিক মুদ্রার বাজারে স্থিতিশীলতা এবং মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করা হয়েছে। এসব পদক্ষেপের মাধ্যমে আমরা কিছু সুফল পেয়েছি। কিন্তু এখনো পূর্ণ স্থিতিশীলতা অর্জিত হয়নি। যে কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক পুরোপুরি সন্তুষ্ট নয়।”
তিনি আরও বলেন, “অর্থনৈতিক খাতের অনেক উদ্যোগ বাস্তবায়নের জন্য সময় প্রয়োজন। কিছু পদক্ষেপের সুফল ইতোমধ্যে পাওয়া গেছে, তবে কয়েকটি ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা প্রয়োজন।”
অর্থ পাচার প্রসঙ্গে হুসনে আরা শিখা বলেন, “চলতি বছরের শেষের দিকে জানা যাবে, কী পরিমাণ অর্থ বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়েছে এবং কোন ব্যাংকের মাধ্যমে কোন দেশে তা পাঠানো হয়েছে। তবে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতে সময় লাগবে। সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো এ বিষয়ে কাজ করছে, তবে নিরাপত্তার স্বার্থে তারা কোনো তথ্য প্রকাশ করছে না।”
তিনি জানান, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বাংলাদেশ আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট (বিএফআইইউ) এখন পর্যন্ত ৪০০ ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছে।
মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্যাংক নীতি সুদ হার বাড়িয়েছে। জানুয়ারিতে মুদ্রাস্ফীতি কমে আসবে বলে আশা করছি। তবে যদি মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে না আসে, তাহলে ফের নীতি সুদ হার বাড়ানো হবে।”
নিম্নমুখী বেসরকারি ঋণ প্রবৃদ্ধি প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র বলেন, “কেবল সুদের হারের ওপরই বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি নির্ভর করছে না। এর সঙ্গে অবকাঠামো উন্নয়ন, জ্বালানি সরবরাহ এবং বন্দর সুবিধা নিশ্চিত করার বিষয়টিও জড়িত। যখন এসব খাতে উন্নতি হবে, তখন বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি স্বাভাবিক হবে।”
বাংলাদেশ ব্যাংক মনে করছে, অর্থনৈতিক খাতের বড় সংকটগুলো অনেকটাই কাটিয়ে উঠেছে। তবে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা পুরোপুরি ফিরে আসতে সময় লাগবে। ব্যাংকিং খাত পুনর্গঠনের পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রার বাজারে স্থিতিশীলতা আনতে আরও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।