২০২৫ সালের শুরুতেই বিশ্ব অর্থনীতি ও বাণিজ্য নিয়ে অনেকের মধ্যেই নানা ধরনের কৌতূহল দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট পুনর্নির্বাচিত হওয়ার পর বিভিন্ন অর্থনৈতিক সিদ্ধান্তের প্রভাব কী হতে পারে, তা নিয়ে জল্পনা-কল্পনা চলছে। ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের (এফটি) এক প্রতিবেদনে বেশ কিছু সম্ভাব্য পরিবর্তন ও চ্যালেঞ্জ তুলে ধরা হয়েছে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের আমদানি পণ্যে শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা করেছেন। এফটি বলছে, বছরের শেষে যুক্তরাষ্ট্র আমদানি করা সব পণ্যে অন্তত ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করতে পারে। চীন ছাড়াও কানাডা ও মেক্সিকোর পণ্যে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক বাড়ানোর হুমকি দেওয়া হয়েছে। তবে এই শুল্ক লড়াইয়ের কারণে মূল্যস্ফীতি বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রে নীতি সুদহার একাধিকবার কমানো হয়েছে। তবে ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে নীতি সুদহারে আর কোনো পরিবর্তন হবে না বলে মনে করছে এফটি। এদিকে ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও ইংল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক নীতি সুদহার কমানোর ধারা অব্যাহত রাখবে।
২০২৪ সালের শেষের দিকে বিটকয়েনের দাম ৫০ শতাংশের বেশি বেড়েছে। ট্রাম্পের প্রশাসনের অধীনে ক্রিপ্টোকারেন্সি লেনদেন সহজ করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। সিকিউরিটিস অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের নতুন নীতির ফলে প্রতিষ্ঠানগুলো বিটকয়েনকে আরও সহজে ব্যবহার করতে পারবে। এফটির অনুমান, বিটকয়েনের দাম ২০২৫ সালে ২ লাখ ডলারে পৌঁছাতে পারে।
২০২৫ সালে ভারতের জিডিপি জাপানকে ছাড়িয়ে যাওয়ার পূর্বাভাস ছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক প্রবৃদ্ধির হার কমে যাওয়ায় এই লক্ষ্য ২০২৬ সালের জন্য পিছিয়ে যেতে পারে। তবে মুদ্রার বিনিময় হারের কারণে পরিস্থিতি দ্রুত পরিবর্তিত হতে পারে।
বিশ্বব্যাপী বৈদ্যুতিক গাড়ির বাজার বৃদ্ধি পেলেও পূর্বাভাসের তুলনায় এর চাহিদা কিছুটা কমতে পারে। ২০২৫ সালে বৈদ্যুতিক গাড়ির বিক্রি মোট গাড়ি বিক্রির ২২ শতাংশে সীমাবদ্ধ থাকতে পারে। ইউরোপে বৈদ্যুতিক গাড়ি বাজারে নতুন মডেল এবং মূল্যছাড় দেওয়ার প্রবণতা বাড়বে। তবে ট্রাম্প প্রশাসন জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহারের পক্ষে অবস্থান নিলেও ইলন মাস্কের মতো প্রভাবশালী ব্যক্তিরা বৈদ্যুতিক গাড়ির বাজারে ইতিবাচক প্রভাব রাখতে পারেন।
চীনের রপ্তানি পণ্যের মূল্য আরও কমতে পারে। ২০২৪ সালের তুলনায় ২০২৫ সালে রপ্তানির মূল্য সূচক ১০ শতাংশ পর্যন্ত কমতে পারে। এর ফলে অন্যান্য দেশগুলোর জন্য চীনের সঙ্গে প্রতিযোগিতা আরও কঠিন হয়ে উঠবে।
বিশ্ব প্রযুক্তি খাতে অ্যালফাবেট, অ্যামাজন, অ্যাপল, মেটা, মাইক্রোসফট, এনভিডিয়া ও টেসলার আধিপত্য বজায় থাকবে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রতি ক্রমবর্ধমান উৎসাহ ২০২৫ সালেও প্রযুক্তি খাতকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। তবে এআই নিয়ে অতিরিক্ত আশাবাদ কিছুটা কমে আসতে পারে।
নীতি সুদহার বৃদ্ধির কারণে মার্কিন ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগ বেড়েছে। তবে ট্রাম্প প্রশাসনের নীতির কারণে এই বাজারে অনিশ্চয়তা তৈরি হতে পারে। কেন্দ্রীয় ঋণ বৃদ্ধি এবং করহার হ্রাসের মতো অঙ্গীকার বাজারে প্রভাব ফেলতে পারে। তবে বিনিয়োগকারীদের আস্থা হারানো এড়াতে ট্রাম্প প্রশাসন সতর্ক থাকবে।
২০২৫ সালে বিশ্ব অর্থনীতি এবং বাণিজ্যে বড় ধরনের পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা রয়েছে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কনীতি, ক্রিপ্টোকারেন্সির উত্থান, বৈদ্যুতিক গাড়ির চাহিদা, চীনের রপ্তানি মূল্য এবং প্রযুক্তি খাতের অগ্রগতি সব মিলিয়ে বিশ্ব অর্থনীতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বছর হতে পারে।