বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের চলমান সংস্কার কর্মসূচির প্রতি তাদের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছে। বিশ্বব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্টিন রেইজার মঙ্গলবার, ১১ ফেব্রুয়ারি, রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় বাংলাদেশ সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয় পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনা করার উদ্দেশ্যে, যেখানে বাংলাদেশে চলমান সংস্কার কর্মসূচি এবং এর গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করা হয়।
বিশ্বব্যাংক এই বৈঠকে বাংলাদেশের সুশাসন ও জবাবদিহি বৃদ্ধির জন্য জরুরি সংস্কারগুলোর বাস্তবায়নে সহায়তা দেওয়ার বিষয়ে তাদের আগ্রহ প্রকাশ করেছে। বিশেষ করে, কর-ব্যবস্থা, সরকারি ক্রয়, পরিসংখ্যান, এবং ডিজিটাইজেশন পদ্ধতি চালু করার বিষয়গুলো আলোচনায় উঠে আসে। মার্টিন রেইজার বলেন, “বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশে সুশাসন ও জবাবদিহির উন্নয়নে সহায়তা করছে, যার মধ্যে কর-নীতি ও প্রশাসন, সরকারি ক্রয় এবং পরিসংখ্যান সংক্রান্ত সংস্কার অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।”
রেইজার আরও বলেন, এই সংস্কারগুলো বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক উত্তরণ এবং ভবিষ্যতে অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, “এই সংস্কারগুলো জনগণ ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠানগুলোর সুশাসন ও জবাবদিহির প্রতি আস্থা তৈরি করতে সহায়তা করবে, যা ভবিষ্যতের অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধির ভিত্তি স্থাপন করবে।”
বিশ্বব্যাংক ভাইস প্রেসিডেন্ট কর প্রশাসন ও কর-নীতির পৃথককরণের আহ্বান জানান, যাতে রাজস্ব ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহি নিশ্চিত করা যায়। তিনি উল্লেখ করেন, “কর রেয়াত ও ছাড় দেওয়ার একমাত্র সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী কর্তৃপক্ষ হওয়া উচিত সংসদ।”
অপরদিকে, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস জানিয়ে দেন, তিনি সম্প্রতি একটি ‘ঐকমত্য কমিশন’ গঠন করেছেন, যা ছয়টি প্রধান সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ আয়োজন করবে। তিনি আরও বলেন, “একবার রাজনৈতিক দলগুলো সংস্কারের বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছালে, তারা জুলাই সনদে স্বাক্ষর করবে, যা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এবং পরবর্তীতে রাজনৈতিক সরকার বাস্তবায়ন করবে।”
বিশ্বব্যাংক ভাইস প্রেসিডেন্ট সরকারি ক্রয় ব্যবস্থার উন্নতি এবং বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর স্বাধীনতা নিশ্চিত করার ওপর জোর দেন, যাতে নীতি-নির্ধারণের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় তথ্যের গুণগত মান উন্নত করা যায়। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের ডিজিটাইজেশন কার্যক্রমে শক্তিশালী ডিজিটাল পরিচয় অবকাঠামোর গুরুত্ব রয়েছে, এবং বিশ্বব্যাংক ঢাকা শহরকে এমন দেশগুলোর সঙ্গে সংযুক্ত করতে সহায়তা করতে পারে, যাদের শক্তিশালী ডিজিটাল পরিচয় ব্যবস্থা রয়েছে।
এভাবে, বাংলাদেশে সুশাসন এবং উন্নয়ন পরিকল্পনাগুলোর ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাংক তাদের সহযোগিতা অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, যা ভবিষ্যতে দেশের রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।