চলতি বছরের শুরুতে বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম বেড়ে প্রতি আউন্স ২,৮০০ ডলারে পৌঁছেছিল। বাজার বিশ্লেষকদের ধারণা ছিল, এ ধারা অব্যাহত থাকলে আগামী বছরের শুরুতেই স্বর্ণের দাম ৩,০০০ ডলার ছাড়িয়ে যাবে। তবে সেই ঊর্ধ্বমুখী ধারা এখন পরিবর্তিত হয়ে নিম্নমুখী হয়ে পড়েছে। বর্তমানে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম নেমে এসেছে ২,৫০০ ডলারের ঘরে।
আন্তর্জাতিক বাজার বিশ্লেষকদের মতে, ডলারের মান শক্তিশালী হওয়া স্বর্ণের দামের পতনের প্রধান কারণ। ডলারের শক্তি বাড়তে থাকায় স্বর্ণের প্রতি বিনিয়োগের আগ্রহ কমেছে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বাজার পর্যবেক্ষণ সংস্থা কেসিএম ট্রেডের শীর্ষ বিশ্লেষক টিম ওয়াটেরার জানান, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয় ডলারের মান বৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা রেখেছে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্রিপ্টোকারেন্সির পক্ষে জোরালো অবস্থান নেওয়ায় বিনিয়োগকারীরা বিটকয়েনের মতো ডিজিটাল মুদ্রায় ঝুঁকছেন। পাশাপাশি বিশ্বযুদ্ধের ঝুঁকি কমে যাওয়ায় বিনিয়োগকারীরা এখন ব্যাংক ও অন্যান্য খাতে বিনিয়োগ করছেন। এতে স্বর্ণের ওপর বিনিয়োগের চাপ কমেছে এবং দাম দ্রুত কমতে শুরু করেছে।
বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দামের পতনের প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশের বাজারেও। বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস) জানায়, চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ৪৯ বার দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম সমন্বয় করা হয়েছে। এর মধ্যে ২৮ বার দাম বাড়ানো হয়েছে এবং ২১ বার কমানো হয়েছে।
সবশেষ গত ১৪ নভেম্বর বাজুস ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরিতে ১,৬৮০ টাকা কমিয়ে দাম নির্ধারণ করেছে ১,৩৪,৫০৯ টাকা। একই সঙ্গে ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি ১,২৮,৩৯৭ টাকা, ১৮ ক্যারেটের ১,১০,০৬২ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির স্বর্ণের প্রতি ভরি ৯০,২৩৩ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
বাজুস স্ট্যান্ডিং কমিটি অন প্রাইসিং অ্যান্ড প্রাইস মনিটরিংয়ের চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমান জানান, ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, বিশ্বযুদ্ধের গুজব এবং ফেডারেল রিজার্ভের সুদহারের কারণে বছর শুরুর দিকে স্বর্ণের প্রতি বিনিয়োগ বেড়েছিল। তবে ট্রাম্পের বিজয়ে ডলারের মান বৃদ্ধি ও যুদ্ধ পরিস্থিতির শঙ্কা কমায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে স্বর্ণের চাহিদা কমেছে।
বিশ্ববাজারে চলমান এই প্রবণতা ধরে থাকলে দেশের বাজারেও স্বর্ণের দাম আরও কমার সম্ভাবনা রয়েছে। বাজুসের মতে, বাজার স্থিতিশীল রাখতে মূল্য সমন্বয়ের প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে।