বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় বর্তমানে বিতর্কের মধ্যে রয়েছেন। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই) একটি তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ করেছে, যেখানে জয় ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে ৩০০ মিলিয়ন ডলার (প্রায় ৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকা) পাচারের অভিযোগ ওঠেছে।
এফবিআইয়ের তদন্ত অনুযায়ী, জয় মালিকানাধীন ৮টি বিলাসবহুল গাড়ির তথ্য পাওয়া গেছে, যার মধ্যে রয়েছে: ম্যাকলারেন ৭২০এস, মার্সিডিজ বেঞ্জ এস-ক্লাস, লেক্সাস জিএক্স ৪৬০, রেঞ্জ রোভারসহ আরও কিছু অত্যাধুনিক গাড়ি। এছাড়া, জয় যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যে সন্দেহজনক ব্যাংক অ্যাকাউন্ট এবং অর্থ স্থানান্তরের বিষয়টি খতিয়ে দেখা হয়েছে। এসব আর্থিক লেনদেনের বিষয়ে বড় ধরনের অনিয়মের প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে দাবি করেছে এফবিআই।
এফবিআইয়ের অনুসন্ধানে আরও উঠে এসেছে, সজীব ওয়াজেদের সাথে পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের সম্পর্ক রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে: ওয়াজেদ কনসালটিং, ইকম সিস্টেমস, এমভিয়ন ও ইন্টেলিজেন্ট ট্রেড সিস্টেমস লিমিটেড। এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বিভিন্ন আর্থিক লেনদেন এবং সরকারী প্রকল্পের সাথে সম্পর্কের বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এফবিআই আরও জানায়, তারা জয়ের সন্দেহজনক কার্যকলাপের বিষয়ে যুক্তরাজ্যের গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে এবং তদন্তের মাধ্যমে অবৈধ ক্রিয়াকলাপের বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। এছাড়া, জয় ও তার স্ত্রী ক্রিস্টিন ওয়াজেদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টের তথ্যও তদন্তের আওতায় এসেছে।
এই অভিযোগের পর বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ২০২৪ সালের ২২ ডিসেম্বর জয় ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে। দুদকের অনুসন্ধান দল সরকারের বিভিন্ন সংস্থা থেকে তথ্য চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছে, তবে অনেক অফিস এখনও সাড়া দেয়নি।
অন্যদিকে, সজীব ওয়াজেদ জয় তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি দাবি করেছেন, তার ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে আনা দুর্নীতির অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন। তিনি জানান, তাদের কোনো অফশোর অ্যাকাউন্ট নেই এবং যে পরিমাণ অর্থের কথা বলা হচ্ছে, তা কখনো দেখেননি।
এছাড়া, ২০২৩ সালের ৫ আগস্ট বাংলাদেশে গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অনুসন্ধান শুরু হয়। দুদক ইতোমধ্যে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ও বিশেষ আশ্রয়ণ প্রকল্পসহ ৯টি প্রকল্পের মাধ্যমে ৮০ হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত করছে।
এ ঘটনায় বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছে, প্রশাসন ও তদন্তকারী সংস্থাগুলো কীভাবে এই অভিযোগগুলো খতিয়ে নিয়ে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করবে।