সুপ্রিম কোর্টে বিচারক নিয়োগে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে স্বতন্ত্র কাউন্সিল গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আজ মঙ্গলবার আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ সংক্রান্ত অধ্যাদেশ জারি এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগের কথা জানান।
আইন উপদেষ্টা জানান, সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নিয়োগ অধ্যাদেশ, ২০২৫ অনুযায়ী একটি স্বতন্ত্র কাউন্সিল গঠনের বিধান করা হয়েছে। এই কাউন্সিলের নাম হবে সুপ্রিম জুডিশিয়াল অ্যাপয়েন্টমেন্ট কাউন্সিল। এতে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে সাত সদস্য থাকবে। সদস্যদের মধ্যে থাকবেন আপিল বিভাগের দুই বিচারক (একজন অবসরপ্রাপ্ত ও একজন কর্মরত), হাইকোর্ট বিভাগের দুই বিচারক, অ্যাটর্নি জেনারেল এবং কাউন্সিল চেয়ারম্যান মনোনীত একজন আইন বিশেষজ্ঞ বা অধ্যাপক।
এই কাউন্সিল সম্ভাব্য প্রার্থীদের নাম সংগ্রহ করবে এবং আবেদন গ্রহণের ব্যবস্থা থাকবে। প্রাথমিক যাচাই-বাছাই শেষে সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে বিচারক নিয়োগের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। অধ্যাপক আসিফ নজরুল আশা প্রকাশ করেন, পরবর্তী বিচারক নিয়োগ এই প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন হবে।
সুপ্রিম কোর্টে পৃথক বিচার বিভাগীয় সচিবালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আইন উপদেষ্টা বলেন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে এই পদক্ষেপ গুরুত্বপূর্ণ। এটি জাতীয় ঐকমত্যে পৌঁছেছে। প্রধান বিচারপতির নির্দেশনায় মাসদার হোসেন মামলার রায়ের আলোকে প্রয়োজনীয় আইনি কাঠামো সংস্কারের কাজ চলছে।
সরকারি কৌঁসুলিদের দলীয় প্রভাবমুক্ত রাখতে স্থায়ী অ্যাটর্নি সার্ভিস চালুর উদ্যোগের কথাও জানানো হয়েছে। আইন উপদেষ্টা বলেন, অনেক সময় সরকারি কৌঁসুলিরা নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে ব্যর্থ হন। স্থায়ী অ্যাটর্নি সার্ভিস চালু হলে এই সমস্যার সমাধান হবে। এক মাসের মধ্যে আইন তৈরির কাজ সম্পন্ন করার আশা প্রকাশ করেন তিনি।
আইন উপদেষ্টা উল্লেখ করেন, অতীতে বিচারক নিয়োগে দলীয়করণ ও অদক্ষ ব্যক্তিদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, যা মানবাধিকার লঙ্ঘন ও বিচার বিভাগের উপর আস্থা সংকট তৈরি করেছে। স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় যোগ্য ও নিরপেক্ষ বিচারক নিয়োগের জন্য নতুন এই অধ্যাদেশ অত্যন্ত সময়োপযোগী।
আইন মন্ত্রণালয়ের ৩৬ ধরনের কাগজপত্র সত্যায়ন এখন অনলাইনে করা হচ্ছে। গত ১৩ ডিসেম্বর থেকে এটি কার্যকর হয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টে বিচারক নিয়োগ, পৃথক সচিবালয় ও স্থায়ী অ্যাটর্নি সার্ভিস চালুর এই উদ্যোগগুলো দেশের বিচার ব্যবস্থার মান উন্নয়ন ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে মাইলফলক হয়ে থাকবে।