দেশের ব্যাংকগুলো সর্বোচ্চ ১২৩ টাকার বেশি দামে প্রবাসী আয়ের ডলার না কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনার সঙ্গে সমন্বয় করে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে ডলারের ক্রয়মূল্য ১২৬-১২৭ টাকায় উঠে যাওয়ার পর এই পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়।
ব্যাংকগুলোর অতিরিক্ত দামে ডলার কেনার ফলে আমদানিকারকদেরও বেশি দামে ডলার কিনতে হচ্ছিল। এতে আমদানি পণ্যের দাম বেড়ে যায়। এই পরিস্থিতি সামাল দিতে এবং ডলারের বাজার নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যাংকগুলোর সমন্বিত উদ্যোগ কাজে লেগেছে।
গতকাল মঙ্গলবার ব্যাংকগুলো সর্বোচ্চ ১২৪ টাকা ৫০ পয়সা দরে প্রবাসী আয়ের ডলার কেনে। এর ফলে ডলারের দাম ধীরে ধীরে কমতে শুরু করেছে।
ডলারের অস্থিরতা নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্যাংক সম্প্রতি ১৩টি ব্যাংকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে। বিদেশি এক্সচেঞ্জ হাউস থেকে বেশি দামে ডলার কেনায় এসব ব্যাংকের ব্যাখ্যা তলব করা হয়। তালিকায় রাষ্ট্রীয় মালিকানার ২টি এবং বেসরকারি খাতের ১১টি ব্যাংক অন্তর্ভুক্ত ছিল। এই পদক্ষেপের পর ব্যাংকগুলো রেমিট্যান্স ডলারের দাম কমিয়ে আনে।
ডলারের মূল্যবৃদ্ধি সত্ত্বেও চলতি ডিসেম্বর মাসের প্রথম ২১ দিনে প্রবাসী আয় ২০০ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার পর এত কম সময়ে এত বেশি প্রবাসী আয় এর আগে কখনো আসেনি। গত আগস্টে নতুন সরকার গঠনের পর প্রতি মাসেই ২০০ কোটি ডলারের বেশি প্রবাসী আয় এসেছে। এ মাসে তিন সপ্তাহেই এসেছে ২০০ কোটি ৭২ লাখ ৩০ হাজার ডলার।
প্রবাসী আয়ের এই প্রবাহের ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বর্তমানে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে ডলার কিনছে। সোমবার দিন শেষে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার মোট মজুত বা রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৪৯৮ কোটি ডলারে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) বিপিএম ৬ হিসাব অনুযায়ী রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ১৬ কোটি ডলারে। দীর্ঘদিন পর বিপিএম ৬ হিসাব অনুযায়ী রিজার্ভ দুই হাজার কোটি ডলার ছাড়াল।
ডিসেম্বরের শুরুতে পুরোনো আমদানি দায় পরিশোধের নির্দেশনার কারণে বাজার কিছুটা অস্থির হয়ে ওঠে। কিছু ব্যাংক বেশি দামে ডলার কেনা শুরু করলে বাজারে ডলারের বিক্রয়মূল্য বেড়ে যায়। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কঠোর পদক্ষেপ এবং ব্যাংকগুলোর সমন্বিত সিদ্ধান্তের ফলে পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে আসতে শুরু করেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক এবং বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর এ ধরনের পদক্ষেপ ডলারের বাজারে স্থিতিশীলতা আনতে সহায়ক হবে বলে আশা করা হচ্ছে। প্রবাসী আয়ের জোরালো প্রবাহ এবং রিজার্ভ বৃদ্ধির ধারা দেশের অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক সংকেত দিচ্ছে। তবে ডলারের বাজার স্থিতিশীল রাখতে সমন্বিত প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।