ঢাকা, ২১ নভেম্বর: বহুল আলোচিত ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার আপিল ও ডেথ রেফারেন্সের ওপর হাইকোর্টে শুনানি শেষ হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রায় ঘোষণার জন্য অপেক্ষমাণ (সিএভি) রেখেছেন।
গত ৩১ অক্টোবর এ মামলার আপিল ও ডেথ রেফারেন্স শুনানি শুরু হয় এবং বৃহস্পতিবার তা শেষ হয়। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. জসিম সরকার। আসামিপক্ষে ছিলেন আইনজীবী এস এম শাহজাহান ও শিশির মনির।
২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর ঢাকার একটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল এ মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর ও বিএনপি নেতা আবদুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেন। এছাড়া বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান (বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান) তারেক রহমানসহ ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং বিভিন্ন মেয়াদে আরও ১১ জনকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
বিচারিক আদালতের রায়ের পর ২০১৮ সালের ২৭ নভেম্বর মামলার নথি ডেথ রেফারেন্স শাখায় পৌঁছে। পাশাপাশি কারাবন্দি আসামিরা আপিল করেন। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে এ মামলার আপিল শুনানি বিচারপতি সহিদুল করিমের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে শুরু হয়। পরে বেঞ্চ পুনর্গঠিত হওয়ায় নতুন বেঞ্চে আবার শুনানি শুরু হয়।
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান আওয়ামী লীগ সভাপতি ও তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা। তবে হামলায় আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক আইভী রহমানসহ ২৪ জন নিহত হন এবং আহত হন দলের তিন শতাধিক নেতাকর্মী।
ঘটনার পরদিন মতিঝিল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ফারুক আহমেদ বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। ২০০৮ সালের ১১ জুন দেওয়া অভিযোগপত্রে বিএনপি নেতা আবদুস সালাম পিন্টু, তার ভাই মাওলানা তাজউদ্দিন ও হুজি নেতা মুফতি আব্দুল হান্নানসহ ২২ জনকে আসামি করা হয়।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর আদালতের নির্দেশে অধিকতর তদন্ত করা হয়। ২০১১ সালের ৩ জুলাই নতুন অভিযোগপত্রে আরও ৩০ জনকে অন্তর্ভুক্ত করে মোট আসামির সংখ্যা ৫২ করা হয়। তবে আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, মুফতি হান্নান ও তার সহযোগী শাহেদুল ইসলাম বিপুলের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ায় বর্তমানে এ মামলায় আসামির সংখ্যা ৪৯ জন।
রায় ঘোষণার সময় ৩১ জন আসামি কারাগারে থাকলেও ১৮ জন পলাতক রয়েছেন। পলাতক আসামিদের মধ্যে আছেন তারেক রহমান, হারিছ চৌধুরী, কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ, এটিএম আমিন, সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দার, খান সাঈদ হাসান, ওবায়দুর রহমান, মুফতি শফিকুর রহমান, মুফতি আবদুল হাই, রাতুল বাবু, মোহাম্মদ হানিফ, আবদুল মালেক, শওকত ওসমান, মাওলানা তাজউদ্দিন, ইকবাল হোসেন, মাওলানা আবু বকর, খলিলুর রহমান ও জাহাঙ্গীর আলম।
মামলার আপিল ও ডেথ রেফারেন্সের শুনানি শেষে আদালত রায় ঘোষণার জন্য অপেক্ষমাণ রেখেছেন। এ মামলার রায়ের দিকে তাকিয়ে আছে পুরো দেশ, কারণ এটি বাংলাদেশের রাজনীতি ও বিচার বিভাগের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়।