জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলায় চলতি বোরো মৌসুমে বিআর-২৮ ও বিআর-২৯ জাতের ধানে ব্লাস্ট রোগ দেখা দিয়েছে। এতে ক্ষতির মুখে পড়েছেন স্থানীয় কৃষকরা। অনেক ক্ষেতেই সার ও কীটনাশক প্রয়োগ করেও প্রতিকার মিলছে না।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, জমির উপরিভাগের মাটি (টপসয়েল) বিক্রি করা জমিতেই ব্লাস্ট রোগের প্রকোপ বেশি। এমনকি হীরা-১৯ এবং কিছু হাইব্রিড জাতেও আক্রান্তের নমুনা পাওয়া গেছে।
কৃষি অফিসের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে উপজেলায়, বিআর-২৮ জাতের ধান: ২৫০ হেক্টর, বিআর-২৯ জাত: প্রায় ৫,০০০ হেক্টর, হাইব্রিড জাত: ১১,০০০ হেক্টর, মোট বোরো ধান: ২০,১৭৫ হেক্টর, রোগের কারণ ও প্রভাব।
ব্লাস্ট রোগ সাধারণত বায়ুবাহিত ছত্রাকের মাধ্যমে ছড়ায়। ধানের শীষের গোড়ায় কালচে ক্ষত তৈরি করে যা খাদ্য পরিবহন ব্যাহত করে ও শীষ চিটা হয়ে যায়। এই রোগ দ্রুত ছড়ায় এবং সময়মতো না বুঝলে প্রতিকারের সুযোগ থাকে না।
ময়মনসিংহ মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আবুল বাশার জানান, “টপসয়েলহীন জমিতে নাইট্রোজেন, ফসফরাস ও পটাশের ঘাটতির কারণে ব্লাস্ট আক্রমণের ঝুঁকি বেশি। অধিক ইউরিয়া ও কম পটাশ ব্যবহারের ফলেই রোগটি ছড়াচ্ছে।”
দাগি ও নলকুড়ি গ্রামের কৃষকরা জানান, বিআর-২৮ ও ২৯ জাতের ধানের শীষে মোহর নেই। কীটনাশক দিয়েও কাজ হয়নি। এমনকি, আক্রান্ত ধানের খড় গরুকে খাওয়ালে পাতলা পায়খানা হচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।
কৃষক মাসুদুর রহমান ও খলিলুর রহমান বলেন, “খোলাবাজার থেকে কীটনাশক কিনে ছিটালেও কোনো কাজ হয়নি। দুই দিনেই ক্ষেত নষ্ট হয়ে গেল। কৃষি অফিসে গিয়েও লাভ হবে না মনে হয়।”
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল ফয়সাল বলেন, “আমরা আগেই মাইকিং করে বিআর-২৮ ও ২৯ জাত আবাদ না করার পরামর্শ দিয়েছি। যারা আমাদের পরামর্শ মানেননি, তারাই এখন ক্ষতিগ্রস্ত।”
তিনি আরও জানান, কৃষকদের বিআর-৮৮, ৮৯, ৯২ ও ৯৪ জাত চাষে উৎসাহিত করা হচ্ছে, যা রোগ প্রতিরোধে সহনশীল এবং ফলনেও ভালো।
কৃষকরা অভিযোগ করছেন, বাজারে ভেজাল কীটনাশকের ছড়াছড়ি রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে সরকারি সংস্থাগুলোর তদারকি এবং কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন তারা।
জামালপুরের মেলান্দহে ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হচ্ছে বিআর-২৮ ও ২৯ জাতের ধান। কৃষি অফিসের মতে, সচেতনতা ও জাত পরিবর্তনই একমাত্র পথ। তবে কৃষকেরা বলছেন, মাঠে বাস্তব সমাধান প্রয়োজন।