শীতলক্ষ্যা নদীর দুই পাড়ে যাতায়াতের অন্যতম মাধ্যম নবীগঞ্জ খেয়াঘাট ও বন্দর ১ নম্বর সেন্ট্রাল ঘাট। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ এই দুই ঘাট দিয়ে নদী পার হলেও, যাত্রীদের অভিযোগ—ঘাটে নেই কোনো সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা, নেই নিরাপত্তা, বরং রয়েছে হয়রানি, দুর্ব্যবহার ও জীবনের ঝুঁকি।
দুই ঘাটেই ট্রলারে অতিরিক্ত যাত্রী তোলা এখন নিয়মে পরিণত হয়েছে। এ কারণে ডুবে যাওয়ার ঝুঁকি প্রতিনিয়তই থেকে যাচ্ছে। যাত্রীদের ভাষ্য মতে, ঘাটে নিযুক্ত কর্মচারীদের আচরণ খুবই খারাপ, যেকোনো কথায় তারা উত্তপ্ত হয়ে যান।
নবীগঞ্জ খেয়াঘাটে নিয়মিত যাত্রী আকবর আলী বলেন, “প্রতিদিন কোনো না কোনো যাত্রীর সাথে খারাপ ব্যবহার করা হয়। একবার দেখেছি এক মহিলাকে বলে রশি দিয়ে বেঁধে রাখবে! কারও সাথে ঝামেলা হলে লাঠি নিয়ে মারতে আসে।” তিনি আরও জানান, টাকা তোলা কর্মীরা চাঁদাবাজির মতো আচরণ করেন।
অন্যদিকে, বন্দর ১নং সেন্ট্রাল ঘাটে জেটি থেকে ট্রলারে উঠতে গিয়ে এর আগেও মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। যাত্রী তাসলিমা আক্তার বলেন, “একবিন্দু জায়গা ফাঁকা থাকলেও ট্রলার ছাড়ে না। নারীদের জন্য এই ভ্রমণ একেবারে অসহনীয়। সরকারের কাছে আমরা এই সমস্যা সমাধানের দাবি জানাচ্ছি।”
দুই ঘাটই এখন রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। স্থানীয় সূত্র বলছে, নবীগঞ্জ ঘাট আগে যুবলীগ নেতা সাজনুর লোকজন পরিচালনা করলেও, এখন যুবদল নেতা সজলের নিয়ন্ত্রণে। বন্দর ঘাট আগে সেলিম ওসমানের অনুসারী বিএনপি নেতা দিদার খন্দকার পরিচালনা করতেন। এখন তিনি জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি জাকির খানের প্রভাব খাটিয়ে ঘাটের নিয়ন্ত্রণে রয়েছেন।
বন্দর ঘাটের দায়িত্বে থাকা দিদার খন্দকার বলেন, “আমরা সরকারি নিয়ম মেনেই ঘাট চালাচ্ছি। অতিরিক্ত টোল আদায় করি না। তবে অভিযোগ থাকতেই পারে।”
ঘাটে থাকা যাত্রীদের প্রধান দাবি, নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, অতিরিক্ত যাত্রী তোলা বন্ধ করা, ট্রলারচালকদের নিয়মিত মনিটরিং, নারীদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ, অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধ।
শীতলক্ষ্যা নদীর ঘাটগুলোতে যাত্রীদের যেসব দুর্ভোগ চলছে, তা শুধু দৈনন্দিন সমস্যা নয়, বরং এটি একটি মানবিক ও নিরাপত্তাজনিত সংকট। প্রশাসনের হস্তক্ষেপ ছাড়া এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া অসম্ভব।