এক বছরের মাথায় আওয়ামী লীগ সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনের বার্ষিকীতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ফের সমাবেশ করলো জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। রোববার (৩ আগস্ট) সন্ধ্যায় আয়োজিত এই সমাবেশে দলটির প্রতিষ্ঠাতা নাহিদ ইসলাম ২৪ দফা নিয়ে ‘নতুন বাংলাদেশের ইশতেহার’ ঘোষণা করেন।
নাহিদ ইসলাম বলেন, “আমাদের এক দফা দাবি ছিল—ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থা বিলোপ করে একটি নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত প্রতিষ্ঠা করা। আমরা আরেক ফ্যাসিবাদকে প্রশ্রয় দিয়ে ঘরে ফিরিনি। বরং সেই শেকড়-গাঁথা ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থাকে উপড়ে ফেলা আমাদের দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।”
তিনি জানান, এই দায়বোধ থেকেই ছাত্র-শ্রমিক-জনতা ও রাজনৈতিক শক্তিকে একত্রিত করে জাতীয় নাগরিক পার্টি গঠন করা হয়েছে।
এদিনের সমাবেশে ঘোষিত ২৪ দফার মধ্যে রয়েছে—জুলাই অভ্যুত্থানের স্বীকৃতি ও বিচার, নতুন সংবিধান ও দ্বিতীয় রিপাবলিক প্রতিষ্ঠা, গণতন্ত্র ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের সংস্কার, ন্যায়ভিত্তিক বিচারব্যবস্থা, দুর্নীতি দমন, ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ, আধুনিক শিক্ষানীতি, সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা, নারীর নিরাপত্তা ও অধিকার, তথ্যপ্রযুক্তি ও উদ্ভাবন, কৃষক-শ্রমিকের অধিকার, প্রবাসীদের মর্যাদা, জলবায়ু সহনীয় উন্নয়ন ও বাংলাদেশপন্থী পররাষ্ট্রনীতি।
এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা বলেন, “আমরা মানুষের সমস্যার ভিত্তিতে সমাধানভিত্তিক রাজনীতি করতে চাই। আমাদের রাজনীতি হবে এমন, যাতে প্রতিটি নাগরিক নিরাপদে ও স্বাচ্ছন্দ্যে রাজনীতিতে অংশ নিতে পারেন।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা এমন স্বাস্থ্যব্যবস্থা গড়ব যেখানে প্রত্যেক নাগরিকের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত তথ্য থাকবে ডিজিটাল ডেটাবেজে। এতে ভুল চিকিৎসা ও অপ্রয়োজনীয় টেস্ট বন্ধ হবে। প্রাথমিক চিকিৎসাকে আমরা শক্তিশালী করব।”
এনসিপির উত্তরাঞ্চল সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেন, “মুজিববাদী সংবিধান আর এই দেশে থাকবে না। এটি একটি দলের। আমরা আজ এই শহীদ মিনার থেকেই বলছি—নতুন সংবিধান চাই।”
তিনি আরও দাবি করেন, “এক বছর আগে যাঁরা এই আন্দোলনে শহীদ হয়েছেন, তাঁদের হত্যার বিচার চাই। শহীদ পরিবারদের পুনর্বাসন ও আহতদের চিকিৎসার নিশ্চয়তা চাই।”
এই সমাবেশের মধ্য দিয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টি ফ্যাসিবাদবিরোধী ও গণতান্ত্রিক রাজনীতির একটি নতুন রূপরেখা উপস্থাপন করেছে। জনগণের মৌলিক অধিকার, সম্মান ও অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে তারা ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের প্রত্যয় ঘোষণা করেছে।