
বাংলাদেশের ভোজ্যতেল বাজারে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হলো। দেশে বছরে যেখানে ভোজ্যতেলের চাহিদা প্রায় ২৪ লাখ টন, সেখানে স্থানীয়ভাবে উৎপাদন হয় মাত্র ৩ লাখ টন। ফলে দেশের ৯০ শতাংশ ভোজ্যতেলই আমদানি নির্ভর, যার বড় অংশ আসে দক্ষিণ আমেরিকার ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা থেকে।
এই বিশাল ঘাটতি পূরণে এবার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এক বিলিয়ন ডলারের সয়াবিন আমদানি চুক্তি সই করেছে বাংলাদেশের তিন শীর্ষ ভোজ্যতেল প্রক্রিয়াজাতকরণ প্রতিষ্ঠান—সিটি গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপ ও ডেল্টা গ্রুপ।
মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য সংগঠন ইউএসএসইসি (U.S. Soybean Export Council) ও বাংলাদেশের এসব প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে এ চুক্তিতে সই করে।
চুক্তি সই অনুষ্ঠানে ইউএসএসইসি’র সিইও কেভিন এম রোপকে বলেন, “সয়াবিন রফতানির মাধ্যমে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় হবে। এতে বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টি নিশ্চিতকরণে বড় ভূমিকা রাখবে।”
সিটি গ্রুপের ম্যানেজিং ডিরেক্টর মো. হাসান বলেন, “কৃষি ভিত্তিক ব্যবসা, খাদ্য নিরাপত্তা ও সরবরাহ ব্যবস্থায় এই চুক্তি পারস্পরিকভাবে লাভজনক হবে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য বাড়লে বাংলাদেশের ভোজ্যতেল খাতে স্থিতিশীলতা আসবে।”
মেঘনা গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. মোস্তফা কামাল বলেন, “চুক্তির ফলে দেশের ভোক্তারা প্রতিযোগিতামূলক দামে মানসম্মত সয়াবিন পাবে। এটি বাংলাদেশের ভোজ্যতেল বাজারে স্থিতিশীলতা আনবে।”
অন্যদিকে ডেল্টা গ্রুপের ম্যানেজিং ডিরেক্টর মো. আমিরুল হক মনে করেন, “এই চুক্তির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে নতুন গতি আসবে এবং দীর্ঘমেয়াদে উভয় দেশের অর্থনীতি উপকৃত হবে।”
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসন। তিনি বলেন, “বাংলাদেশ এখন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য সহযোগী দেশ। এই চুক্তির মাধ্যমে আমাদের অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব আরও মজবুত হবে।”
সর্বশেষ ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করেছে ২৫০ কোটি ডলারের পণ্য, আর রফতানি করেছে ৬২৬ কোটি ডলার। অর্থাৎ, দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সম্পর্ক ক্রমেই সম্প্রসারিত হচ্ছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সয়াবিন আমদানি চুক্তি শুধু ভোজ্যতেল বাজারের স্থিতিশীলতা নয়, বরং বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তা ও কৃষিভিত্তিক শিল্পে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করবে।