বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও তার দুর্বলতার কারণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের চেয়ারম্যান ও সাবেক বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি বলেন, বিচার বিভাগ সরকারের সবচেয়ে দুর্বলতম বিভাগে পরিণত হয়েছে। কোনো সরকারই বিচার বিভাগের প্রতি যথার্থ নজর দেয়নি। বিচার বিভাগ স্বাধীন না থাকলে জনগণের আস্থা নষ্ট হয়, যা রাষ্ট্রের জন্য বিপজ্জনক।
বুধবার (২০ নভেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘নির্বাহী বিভাগ হতে বিচার বিভাগ পৃথককরণের ১৭ বছর’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিচারপতি মইনুল ইসলাম এ কথা বলেন। মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যানিটি ফাউন্ডেশন এবং মাসিক আইন ও বিচার এই সভার আয়োজন করে।
বিচার বিভাগের বর্তমান অবস্থাকে “সামষ্টিক ব্যর্থতা” হিসেবে উল্লেখ করে মইনুল ইসলাম বলেন, “বিচার বিভাগ আইনি ও নির্বাহী বিভাগের স্বচ্ছতা নির্ধারণে কাজ করতে পারে, কিন্তু তা স্বাধীনভাবে করতে হবে। বিচারকদের মানসিকভাবে স্বাধীন হতে হবে। না হলে বিচার বিভাগের কাঙ্ক্ষিত ফল আসবে না।”
সাবেক জেলা জজ এবং আইন সংস্কার কমিশনের সদস্য মাসদার হোসেন বলেন, বিচার বিভাগ পৃথক হলেও এখনো প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তিনি দাবি করেন, “বিচারকদের নিয়োগ, নিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খলার বিষয়গুলো প্রধান বিচারপতির অধীনে আনতে হবে। পৃথক সচিবালয় গঠন ছাড়া বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়।”
সুপ্রিম কোর্টের সাবেক রেজিস্ট্রার জেনারেল ইকতেদার আহমেদ বলেন, “বিচার বিভাগের নিয়ন্ত্রণ আইন মন্ত্রণালয়ের পরিবর্তে সুপ্রিম কোর্টের হাতে যেতে হবে। তবে তার আগে সুপ্রিম কোর্টে সঠিক অবকাঠামো তৈরি করতে হবে। বর্তমানে উচ্চ আদালতের বিচারকদের যোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।”
গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের সদস্য জিমি আমির মন্তব্য করেন, সুবিচার না পাওয়ার কারণেই মানুষ আন্দোলনে নেমেছে। সুবিচার নিশ্চিত করতে বিচার বিভাগকে পূর্ণ স্বাধীনতা দিতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে হিউম্যানিটি ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ শফিকুর রহমান বলেন, “শুধু গত ১৬ বছর নয়, পেছনের ৫৩ বছরের বিচার ব্যবস্থার সংকট নিয়ে কথা বলতে হবে। বিচার বিভাগের এমন অবস্থা কখনো কাম্য নয়।”
সভায় জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শাকিল আহমেদ, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সাদিয়া আরমান প্রমুখ বক্তৃতা দেন। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন হিউম্যানিটি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক মো. পারভেজ।
বিচার বিভাগকে স্বাধীন ও শক্তিশালী করার জন্য আইনি কাঠামোর সংস্কার এবং কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন আলোচকরা। বক্তারা সবাই একমত যে, বিচার বিভাগের দুর্বলতা দূর করতে হলে সরকারের সদিচ্ছা ও কার্যকর পদক্ষেপ জরুরি।