৬ লাখ ৭৫ হাজার কোটি টাকা মন্দ ঋণ
বাংলাদেশের ব্যাংক খাত বর্তমানে এক বিপর্যয়ের মধ্যে রয়েছে, যেখানে মন্দ ঋণের পরিমাণ আকাশচুম্বী। এটির পরিমাণ এত বেশি যে, এর মাধ্যমে ১৪টি মেট্রোরেল এবং ২৪টি পদ্মা সেতু নির্মাণ করা সম্ভব ছিল। এই পরিস্থিতি বিশেষভাবে বিগত সরকারের আমলে উদ্ভূত সমস্যার ফলস্বরূপ তৈরি হয়েছে, যখন ব্যাংক খাতে ব্যাপক দুর্নীতি, অনিয়ম, ঋণ কেলেঙ্কারি এবং অর্থপাচারের ঘটনা ঘটেছে।
সম্প্রতি, কমিটির প্রধান ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য ১ ডিসেম্বর প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে ব্যাংক খাতের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে একটি প্রতিবেদন হস্তান্তর করেন। এতে বলা হয়েছে, দেশের ব্যাংক খাত এক প্রকার ‘ব্ল্যাকহোলের’ মধ্যে ঢুকে গেছে এবং গত ১৫ বছরে এই খাতটি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, মন্দ ঋণের পরিমাণ যা বর্তমানে ৬ লাখ ৭৫ হাজার ৩০ কোটি টাকা, তা দেশের অর্থনীতির জন্য এক বড় বিপদ।
বিগত জুন মাসে বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, দেশের ব্যাংক খাতে মোট মন্দ ঋণ ছিল ৬ লাখ ৭৫ হাজার ৩০ কোটি টাকা। এই অর্থ দিয়ে ১৪টি মেট্রোরেল এবং ২৪টি পদ্মা সেতু নির্মাণ করা সম্ভব ছিল। এছাড়া, খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ২ লাখ ১১ হাজার ৩৯১ কোটি টাকা, পুনঃ তফসিল ও পুনর্গঠিত ঋণ ছিল ২ লাখ ৭২ হাজার ৮৫৬ কোটি টাকা, এবং অবলোপন করা ঋণের পরিমাণ ছিল ৭৫ হাজার ৩৮৯ কোটি টাকা।
প্রতিবেদন অনুসারে, ব্যাংক খাতে দুর্নীতি ও অনিয়মের নেপথ্যে রয়েছে ঋণ কেলেঙ্কারি, প্রতারণা, ভুয়া ঋণ প্রদান এবং ঋণের অপব্যবহার। এছাড়া, রাষ্ট্রীয় মদদে ব্যাংক দখলের ঘটনা ঘটেছে, যার ফলে ব্যাংক খাতে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার হয়েছে বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, ‘‘আমরা দেশের আর্থিক খাতের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করছি।’’ তিনি সতর্ক করেছেন যে, আগামী মাসগুলোতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ২৫ থেকে ৩০ শতাংশে পৌঁছাতে পারে, যা বর্তমানে ১২.৫ শতাংশ। তিনি উল্লেখ করেন, ২০১৭ সালের পর কয়েকটি বড় গ্রুপ এবং ব্যবসায়ী, বিশেষত এস আলম এবং সাইফুজ্জামান চৌধুরী, ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে তা পাচার করেছেন। এই ঋণগুলোর একটি বড় অংশ ইতোমধ্যে খেলাপি হয়ে গেছে, এবং তার হিসাবও এখন আসছে।
কমিটি এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ইতিমধ্যেই এ বিষয়টি নিয়ে কাজ শুরু করেছেন, তবে এটি একটি দীর্ঘমেয়াদী সংকট হয়ে দাঁড়িয়েছে। ব্যাংক খাতের এই পরিস্থিতি দেশের অর্থনীতির জন্য গুরুতর হুমকি, যার পরিণতি সমগ্র দেশের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে।
১ ডিসেম্বর শ্বেতপত্র হস্তান্তরের সময় উপস্থিত ছিলেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ, মুখ্য সচিব সিরাজ উদ্দিন সাথী, সিনিয়র সচিব লামিয়া মোর্শেদ প্রমুখ। তারা সবাই একত্রে ব্যাংক খাতের দুর্দশা নিরসনে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য আশাবাদী।
বাংলাদেশের ব্যাংক খাতের বর্তমান পরিস্থিতি দেশের অর্থনীতির জন্য এক বিপজ্জনক সংকট তৈরি করেছে। এতে মন্দ ঋণের পরিমাণ এত বেশি যে তা দেশের বৃহৎ প্রকল্প নির্মাণের জন্য ব্যবহার করা সম্ভব ছিল। এই পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া জরুরি, নাহলে ভবিষ্যতে এর চড়া মূল্য দিতে হবে।