গত এক দশকে বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে একাধিক সংকট দেখা দিয়েছে, যার মূল কারণ বেনামি কোম্পানির মাধ্যমে শেয়ার কেনা এবং অস্বচ্ছ মালিকানা কাঠামো। এর ফলে বেশ কয়েকটি ব্যাংক খালি হয়ে পড়ে এবং এই পরিস্থিতি পরিচালনা করেছেন মনোনীত প্রতিনিধিরা। এমন পরিস্থিতি এড়াতে বাংলাদেশ ব্যাংক ২ শতাংশ বা তার বেশি শেয়ারধারীর প্রকৃত সুবিধাভোগী মালিক বা আলটিমেট বেনিফিশিয়াল ওনার্স (ইউবিও) নির্ধারণে একটি নতুন নীতিমালা চালু করেছে।
গত রোববার (২ ডিসেম্বর) কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই নীতিমালাটি সব ব্যাংকে পাঠিয়েছে। নতুন এই নীতিমালার মূল লক্ষ্য শেয়ারের প্রকৃত সুবিধাভোগী নির্ধারণ করা। ২ শতাংশ বা তার বেশি শেয়ারধারী ব্যক্তি, পরিবার বা প্রতিষ্ঠানকে প্রকৃত মালিক হিসেবে বিবেচনা করা হবে। একাধিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ২ শতাংশ বা তার বেশি শেয়ার ধারণ করলেও তা নীতিমালার আওতায় আসবে।
ব্যাংকগুলোকে আগামী ৩১ মার্চের মধ্যে এই নীতিমালা অনুযায়ী তথ্য জমা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি প্রতিটি প্রান্তিক শেষে শেয়ারধারীদের তথ্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা দিতে হবে।
প্রতিটি ব্যাংকের শেয়ারধারীদের তথ্যভান্ডার থাকতে হবে। এই তথ্যভান্ডার ইউবিও ডেটাবেজ তৈরিতে সহায়ক হবে। শেয়ার সম্পর্কিত কোনো পরিবর্তন হলে তাৎক্ষণিকভাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জানাতে হবে। শেয়ারধারীর প্রকৃত মালিকানা নিয়ে কোনো অসংগতি পেলে বাংলাদেশ ব্যাংক আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারবে। শেয়ার সম্পর্কিত তথ্যের সঠিকতার জন্য ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, শেয়ার বিভাগের প্রধান এবং কোম্পানি সচিব দায়বদ্ধ থাকবেন। ভুল তথ্য দিলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কেউ যদি মিথ্যা তথ্য দেন, তবে ব্যাংক কোম্পানি আইনের আওতায় তার শেয়ার রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করা হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে, একটি ব্যাংকের মালিকানা কাঠামোর অস্বচ্ছতা ব্যাংকের প্রকৃত অবস্থা মূল্যায়ন ও মূলধনের চিত্র নির্ধারণে বাধা সৃষ্টি করে। এটি নিয়ন্ত্রক সংস্থার তদারকি প্রক্রিয়াকেও কঠিন করে তোলে। এই অস্বচ্ছতা দূর করতে শেয়ারধারীর প্রকৃত মালিকানা সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ এবং তা নিয়মিত হালনাগাদ করার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।
২০১৭ সালে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) শেয়ারের প্রকৃত সুবিধাভোগীদের শনাক্তকরণে একটি নীতিমালা প্রণয়ন করেছিল। কিন্তু সঠিক তদারকির অভাবে এই নীতিমালা কার্যকর হয়নি। এর ফলে বেনামে শেয়ার ধারণ এবং ঋণ গ্রহণের মতো সমস্যাগুলি বেড়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংকের এই নতুন নীতিমালা ব্যাংকিং খাতের আর্থিক সুস্থতা ও স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এই নতুন নীতিমালা ব্যাংকিং খাতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এর ফলে শেয়ারহোল্ডারদের প্রকৃত পরিচয় স্পষ্ট হবে এবং ব্যাংকিং খাতের সংকট মোকাবিলায় দীর্ঘমেয়াদী সমাধান পাওয়া যাবে।