লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার উত্তর চরবংশী ইউনিয়নে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। দুই দিন ধরে চলা এই সংঘর্ষে অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। দলীয় কার্যালয়, দোকানপাট, বসতবাড়ি ভাঙচুর এবং দুটি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে এলাকায় পুলিশি টহল জোরদার করা হয়েছে।
এলাকাবাসী ও দলীয় সূত্র জানায়, সংঘর্ষের এক পক্ষের নেতৃত্ব দেন উত্তর চরবংশী ইউনিয়ন বিএনপির সহসভাপতি মো. ফারুক কবিরাজ এবং অপর পক্ষের নেতৃত্ব দেন রায়পুর উপজেলা কৃষক দলের সদস্যসচিব জি এম শামীম।
জি এম শামীম অভিযোগ করেন, ফারুক কবিরাজ আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা-কর্মীদের বিএনপিতে প্রতিষ্ঠিত করতে চাইছেন। এতে তিনি আপত্তি জানান, যা দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্টি করে। এ সংঘর্ষে তাঁর দুটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান লুটপাট, চারটি বাড়ি ভাঙচুর এবং মাছ ও টাকা লুট করার অভিযোগও করেছেন শামীম।
অন্যদিকে, ফারুক কবিরাজ অভিযোগ করেন, শামীমের শ্বশুর শফিক রহমান রাঢ়ী তাঁর সমর্থক আবু ইউছুফকে কুপিয়ে তাঁর কান কেটে ফেলেছেন। এ ঘটনায় স্থানীয় লোকজন ক্ষুব্ধ হয়ে শামীমের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ শুরু করেন।
সংঘর্ষে আহতদের মধ্যে রয়েছেন শফিক রহমান রাঢ়ী, রাসেল রাঢ়ী, আবু ইউছুফ, তাহমিনা বেগম, লিটন রাঢ়ী, গণি রাঢ়ী, মিজান খান, কবির হোসেনসহ মোট ১০ জন। তাঁদের মধ্যে কয়েকজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, রায়পুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
সংঘর্ষের প্রেক্ষিতে শুক্রবার রাতে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক জেড এম নাজমুল ইসলামের নেতৃত্বে জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে ইউনিয়ন বিএনপির সব কার্যক্রম স্থগিত এবং একটি তদন্ত কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কমিটিতে উপজেলা বিএনপির শীর্ষ নেতাদের পাশাপাশি জেলা কমিটির সহযোগী ও অঙ্গসংগঠনের একজন করে প্রতিনিধি রাখা হয়েছে। কমিটিকে তিন দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
রায়পুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নিজাম উদ্দিন ভুঁইয়া জানান, দুই পক্ষের দীর্ঘদিনের বিরোধের কারণে এই সংঘর্ষ ঘটেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশি টহল জোরদার করা হয়েছে। সংঘর্ষের সময় সেনাবাহিনীও স্থানীয়ভাবে সহায়তা করেছে।
বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত থাকলেও এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। স্থানীয় প্রশাসন সতর্ক অবস্থানে রয়েছে, এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ সদস্যরা রাত-দিন টহল দিচ্ছেন।
এই ঘটনায় বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন এবং অচিরেই শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেবেন বলে জানা গেছে।