1. [email protected] : Hossain Monir : Hossain Monir
  2. [email protected] : RT BD NEWS : RT BD NEWS
  3. [email protected] : RT BD NEWS :
বুধবার, ১৮ জুন ২০২৫, ০৩:২৫ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
ইরান ছাড়তে চাওয়া বাংলাদেশিদের জন্য দূতাবাসের জরুরি বার্তা এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলমের ২০০ একর জমি ক্রোকের আদেশ জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংলাপ বয়কট করল জামায়াতে ইসলামী রাতের মধ্যে ঢাকাসহ ১৮ অঞ্চলে বজ্রসহ ঝড়ের সতর্কতা ইরানে ইসরায়েলি হামলায় ৪৫২ জন নিহত: মানবাধিকার সংস্থার প্রতিবেদন অন্তর্বর্তী সরকার সব দলের সঙ্গে সমান আচরণ করছে: প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব কালীগঞ্জে ১৬ পিচ ককটেলসহ বিএনপি কর্মী আটক লেবাননে সংঘাতের ঝুঁকিতে বাংলাদেশিদের চলাফেরায় সতর্ক থাকার অনুরোধ তেহরানে ইরানি টেলিভিশন ভবনে ইসরায়েলের হামলা অবশেষে আলোচিত খুলনার দিঘলিয়ায় বারাকপুর ইউপি চেয়ারম্যান পাভেল কে অপসারণ করে প্রশাসন নিয়োগ

মুন্সিগঞ্জের সাংবাদিক ইউনিয়ন: বিতর্কিত সদস্যপদ এবং নেতৃত্বের অধঃপতন

স্টাফ রিপোর্টার
  • প্রকাশিত: সোমবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০২৪

বাংলাদেশের সাম্প্রতিক প্রেক্ষাপটে সাংবাদিকতার মতো পেশাকে ঘিরে নানা বিতর্ক ও অভিযোগ উঠে আসছে। মুন্সিগঞ্জের সাংবাদিকতা ক্ষেত্রেও এক ধরণের বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। একদিকে পেশাদার সাংবাদিকদের অভাব, অন্যদিকে অপেশাদার, অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিদের সাংবাদিকতার নামে দাপট বেড়ে চলেছে। এ নিয়ে স্থানীয় জনগণ, প্রশাসন এবং মিডিয়া মহলে চরম হতাশা দেখা দিয়েছে।

মুন্সিগঞ্জ জেলার ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সদস্যদের নিয়ে নানা অভিযোগ উঠে আসছে। অভিযোগ রয়েছে, এই সংগঠনে প্রকৃত সাংবাদিকদের চেয়ে মুচি, কাঠমিস্ত্রি, রাজমিস্ত্রি, পল্লী বিদ্যুৎ কর্মচারী, পাসপোর্ট দালাল, এমনকি মাদক মামলার আসামি এবং মোটর সাইকেল চোর পর্যন্ত সদস্য হিসেবে যুক্ত হয়েছে।

এছাড়া বিয়ে বাড়িতে ভিডিও ধারণকারী, গরুর দুধ ব্যবসায়ী এবং ভোট প্রদর্শনে সক্রিয় কর্মীদেরও সাংবাদিক হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার অভিযোগ রয়েছে। এ ধরনের কর্মকাণ্ড সাংবাদিকতার পেশাকে হাস্যকর করে তুলেছে এবং সমাজের মানুষদের কাছে সাংবাদিকতার মর্যাদাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।

মুন্সিগঞ্জের একজন স্বঘোষিত সাংবাদিক, যিনি অতীতে শ্রমিক লীগের সদস্য ছিলেন এবং বর্তমানে নিজেকে হকার্স লীগের নেতা দাবি করেন, তার বিরুদ্ধে অনেক গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। তাকে সাজাপ্রাপ্ত আসামি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তবুও, তার মতো ব্যক্তিকে ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের নেতা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে, যা সাংবাদিকতার নৈতিকতার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।

অভিযোগ রয়েছে, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় নেতাদের প্রভাবেই মুন্সিগঞ্জে এই ধরনের অপেশাদার নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ঢাকা থেকে আসা কেন্দ্রীয় নেতারা প্রায়ই এই অপেশাদার সদস্যদের সমর্থন দিয়ে তাদের পৃষ্ঠপোষকতা করছেন। এমনকি কিছু কেন্দ্রীয় নেতার বিরুদ্ধেও অভিযোগ রয়েছে যে তারা এসব নেতাদের মাধ্যমে স্থানীয় রাজনৈতিক স্বার্থ রক্ষা করছেন।

মুন্সিগঞ্জের সাংবাদিকদের এমন পরিস্থিতি নিয়ে স্থানীয় প্রশাসনের মধ্যেও হাস্যরসের সৃষ্টি হয়েছে। সরকারী দপ্তরে সাংবাদিকদের নাম শুনলেই অনেকেই বিষয়টিকে গুরুত্বহীনভাবে দেখেন। এটি কেবল স্থানীয় সাংবাদিকদের নয়, পুরো দেশের সাংবাদিক সমাজের জন্য অপমানজনক।

নির্বাচনী সময়ে ঢাকার নেতাদের মুন্সিগঞ্জে আসা এবং স্থানীয় জনগণের প্রতিক্রিয়া পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তোলে। কিছু ঢাকার নেতা জনগণের ক্ষোভের মুখে পালিয়ে যান, আবার কেউ স্থানীয় নেতাদের সহায়তায় পরিস্থিতি সামাল দেন। এই ধরণের ঘটনা সাংবাদিকতার প্রতি জনগণের আস্থাকে নষ্ট করছে।

ঢাকার কেন্দ্রীয় নেতাদের কার্যকলাপ নিয়ে স্থানীয় পর্যায়ে ব্যাপক প্রশ্ন উঠছে। অভিযোগ রয়েছে, মাস শেষে মাত্র হাজার দুয়েক টাকা বিকাশে পাঠিয়ে মুন্সিগঞ্জ জেলার সাংবাদিক ইউনিয়নের নেতাদের নিয়ন্ত্রণ করছেন তারা। ঢাকার নেতারা গ্রামের মফস্বলে এসে ইলিশ মাছ ভাজা খাওয়া, তাজা তরকারি উপভোগ করা, এমনকি সুন্দরী নারীর খোঁজে সময় কাটান বলে কথিত রয়েছে। এসব কর্মকাণ্ড সাংবাদিকতার পেশাগত মর্যাদার প্রতি চরম অবমাননা।

মুন্সিগঞ্জ জেলার ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের বর্তমান সদস্য সংখ্যা ৮৬ জন, যার মধ্যে ৭২ জনের এসএসসি পাস সার্টিফিকেট নেই। এমনকি অভিযোগ রয়েছে যে, তাদের মধ্যে অনেকে ভুয়া সার্টিফিকেট তৈরি করে ঢাকার নেতাদের দেখিয়ে সদস্যপদ পেয়েছে। ৩০ জন সদস্য কোনো বিদ্যালয়ে পড়াশোনাই করেননি, অথচ তারা এখন সাংবাদিক ইউনিয়নের সক্রিয় অংশ। এই ধরণের অপেশাদার সাংবাদিক তৈরি করা কেবল মুন্সিগঞ্জে নয়, পুরো দেশে সাংবাদিকতার মর্যাদা এবং নৈতিকতার অধঃপতনের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বিভিন্ন অপরাধমূলক কার্যকলাপে জড়িত ব্যক্তিদের সাংবাদিক ইউনিয়নে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নামে হত্যা মামলার আসামিদের দিয়ে কমিটি তৈরি করা হচ্ছে। এসব কর্মকাণ্ডে স্থানীয় প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দৃষ্টিতে সাংবাদিক ইউনিয়নের কার্যক্রম একটি ঠাট্টা এবং কৌতুকের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এসএসসি পাস না করা ব্যক্তিদের সাংবাদিক ইউনিয়নের সদস্য করে তোলা এবং চাঁদাবাজদের নেতৃত্বে বসানোর ফলে মফস্বল সাংবাদিক সমাজ চরম সংকটে পড়েছে। এতে মুন্সিগঞ্জের সাংবাদিক সমাজের গুণগত মান শুধু নষ্টই হচ্ছে না, পুরো সাংবাদিক সমাজ একটি চাঁদাবাজ চক্রের কাছে জিম্মি হয়ে পড়ছে। এ ধরনের কর্মকাণ্ড কি জাতীয়তাবাদ বা দেশপ্রেমের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ? এই প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে স্থানীয় জনগণের মধ্যে।

মুন্সিগঞ্জের সাংবাদিকতার বর্তমান অবস্থা কেবল একটি জেলার নয়, বরং পুরো দেশের সাংবাদিকতার জন্য একটি সতর্ক সংকেত। সাংবাদিকতা একটি সম্মানজনক পেশা এবং এটি সঠিক নীতি, নৈতিকতা ও পেশাদারিত্বের ভিত্তিতে পরিচালিত হওয়া উচিত। স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে এই সমস্যা সমাধানে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে, নইলে সাংবাদিকতার প্রতি জনগণের আস্থা পুরোপুরি হারিয়ে যাবে।

এই ধরনের বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি কেবল মুন্সিগঞ্জেই নয়, বরং পুরো দেশের সাংবাদিকতার মান উন্নয়নে একটি বড় প্রতিবন্ধকতা। প্রশাসন এবং কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের উচিত সাংবাদিকতার নৈতিকতা এবং পেশাদারিত্ব পুনরুদ্ধারে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া।

আরো সংবাদ পড়ুন
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত 𝑹𝑻 𝑩𝑫 𝑵𝑬𝑾𝑺 আমাদের প্রকাশিত সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার অপরাধ।
ওয়েবসাইট ডিজাইন: ইয়োলো হোস্ট