দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং বহিঃশত্রুর হাত থেকে দেশকে সুরক্ষিত রাখা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মুখ্য কাজ। এ দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা রক্ষা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা, এবং জাতীয় উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা বাংলাদেশ সেনাবাহিনী জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বাস্তবায়নে পেশাদারিত্ব, সততা, এবং আন্তরিকতার পরিচয় দিচ্ছে। সেনাবাহিনী দেশের অগ্রগতিতে অবদান রাখতে সর্বদা বদ্ধপরিকর।
দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা রক্ষায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করছে। অনাকাঙ্ক্ষিত অরাজকতা প্রতিরোধ, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখা, বিদেশি কূটনৈতিক ব্যক্তিবর্গের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, গুরুত্বপূর্ণ শিল্পাঞ্চল ও সরকারি-বেসরকারি স্থাপনাসমূহের নিরাপত্তা বিধান করা, এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সেনাবাহিনী নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এ কার্যক্রমগুলোতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের কোনো ঘটনা ঘটেনি।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। ৫ আগস্টের পর নিষ্ক্রিয় থাকা থানাগুলো সচল করতে এবং নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতার নিয়মতান্ত্রিক প্রয়োগ নিশ্চিত করতে সেনাবাহিনী কাজ করেছে। বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসব শান্তিপূর্ণভাবে উদযাপনে এবং বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসা প্রদানে সেনাবাহিনী সহযোগিতা করেছে।
পদ্মা সেতুর সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্বে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী নিয়োজিত রয়েছে। সেনাবাহিনীর পদাতিক ও রিভারাইন ইঞ্জিনিয়ার ব্যাটালিয়ন মাওয়া ও জাজিরা প্রান্তে সেতুর স্থল ও জলপথ নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে। পদ্মা সেতুর মাধ্যমে জাতীয় নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা হচ্ছে।
পার্বত্য তিন জেলায় শান্তি, সম্প্রীতি, এবং উন্নয়ন রক্ষায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী স্থায়ীভাবে মোতায়েন রয়েছে। পাহাড়ি সন্ত্রাসীদের অপতৎপরতা প্রতিহত করতে এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নে সেনাবাহিনী নিয়মিত ভূমিকা পালন করছে।
পার্বত্য চট্টগ্রামে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রায় ১,৫৩২ কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণ, ছোট নদী ও খালের ওপর সেতু/সাঁকো নির্মাণ, এবং সীমান্ত সড়ক প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এসব প্রকল্প পার্বত্য অঞ্চলের মানুষের জীবনমান উন্নত করতে ভূমিকা রাখছে।
সাম্প্রতিক সময়ে পাহাড়ি সন্ত্রাসী সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল আর্মি (কেএনএ) পাহাড়ি অঞ্চলকে অস্থিতিশীল করতে চেষ্টা চালালেও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে বিশেষ যৌথ অভিযানের মাধ্যমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। মানবাধিকার রক্ষা করে কেএনএ সদস্যদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
জাতি গঠনমূলক কর্মকাণ্ডে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অবদান জনগণের আস্থা অর্জনে সহায়ক হয়েছে। জাতীয় পরিচয়পত্র, মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট, এবং রাস্তাঘাট নির্মাণে সেনাবাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। দুর্যোগ মোকাবিলা ও উদ্ধারকাজে সেনাবাহিনীর কার্যক্রম প্রশংসিত হয়েছে।
বন্যা, ভূমিধস, ভূমিকম্প, অগ্নিকাণ্ডসহ বিভিন্ন দুর্যোগে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আর্তমানবতার সেবায় দ্রুত সহায়তা প্রদান করেছে। ২০২২ সালে সিলেট ও সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সেনাবাহিনীর সক্রিয় ভূমিকা ছিল।
মানসম্পন্ন শিক্ষা প্রদানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছে। সেনাবাহিনী পরিচালিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস (বিইউপি), মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি (এমআইএসটি), এবং বারোটি ক্যাডেট কলেজ। প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য সেনাবাহিনীর ‘প্রয়াস’ স্কুল দেশের সুনাম অর্জন করেছে।
কোভিড-১৯ মহামারির সময় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কোয়ারেন্টাইন সুবিধা স্থাপন, চিকিৎসাসামগ্রী বিতরণ, এবং সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। সেনা চিকিৎসকরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসা দিয়েছেন।
আশ্রয়ণ প্রকল্পে ভূমিহীন জনগণের জন্য আবাসন নির্মাণে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। জাতীয় মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি (বিএমটিএফ) সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। সেনা কল্যাণ সংস্থা খাদ্যপণ্য সরবরাহ করে জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তায় অবদান রাখছে।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প, যেমন পদ্মা সেতু রেল সংযোগ, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, এবং কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ, বাস্তবায়নে ভূমিকা রেখেছে। এসব প্রকল্প দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহায়ক।
দেশের সড়ক অবকাঠামো উন্নয়নে সেনাবাহিনী হাতিরঝিল ইউলুপ, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, এবং বিভিন্ন ফ্লাইওভার নির্মাণে ভূমিকা রেখেছে। কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ প্রকল্পটি সমুদ্র তীরবর্তী এলাকায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে।
বাংলাদেশের জনগণের কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বাংলাদেশ সেনাবাহিনী জাতির স্বার্থে সর্বদা প্রস্তুত। তাদের নিরলস প্রচেষ্টায় দেশের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প, জাতীয় নিরাপত্তা, এবং আর্তমানবতার সেবায় উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে চলেছে।