গতকাল বুধবারের ধারাবাহিকতায় আজ বৃহস্পতিবারও বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমেছে। মূলত যুক্তরাষ্ট্রের তেলের মজুত উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় এ দাম কমেছে। তবে ওপেক ও সহযোগী দেশগুলোর তেল সরবরাহ কমে যাওয়ায় দাম আরও বেশি কমতে পারেনি। তেলের বাজার পরিস্থিতি নিয়ে বিশ্লেষকরা সতর্কবার্তা দিয়েছেন।
আজ বৃহস্পতিবার সকালে ব্রেন্ট ক্রুড তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ২৮ সেন্ট বা শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৭৫ দশমিক ৮৮ ডলার। অন্যদিকে, ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট ক্রুড (ডব্লিউটিআই) তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ৩০ সেন্ট বা শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৭৩ দশমিক ০২ ডলার।
এর আগের দিন বুধবারও বিশ্ববাজারে উভয় প্রকৃতির তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ১ শতাংশের বেশি কমেছিল।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের গ্যাসোলিন মজুত গত সপ্তাহে ৬৩ লাখ ব্যারেল বেড়ে মোট মজুত দাঁড়িয়েছে ২৩ কোটি ৭৭ লাখ ব্যারেল। বিশ্লেষকদের ধারণা ছিল, মজুত বৃদ্ধির পরিমাণ হবে বড়জোর ১৬৫ লাখ ব্যারেল। কিন্তু প্রত্যাশার তুলনায় মজুত বৃদ্ধি অনেক বেশি হওয়ায় তেলের বাজারে সরবরাহ বেড়ে গেছে।
তবে ব্রেন্ট ক্রুড তেলের মজুত ৯ লাখ ৫৯ হাজার ব্যারেল কমেছে।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের মজুত বৃদ্ধি সত্ত্বেও তেলের দাম উল্লেখযোগ্য হারে কমার সম্ভাবনা নেই। কারণ হিসেবে তাঁরা উল্লেখ করেছেন, শীতকালীন সময়ে শীতপ্রধান দেশগুলোতে জ্বালানির চাহিদা স্বাভাবিকভাবেই বেড়ে যায়।
চীনের অর্থনৈতিক কার্যক্রম বাড়তে থাকায় দেশটির জ্বালানির চাহিদা বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। এ ছাড়া রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব ও মার্কিন প্রশাসনের জ্বালানি নীতির ওপরও তেলের বাজারের ভবিষ্যৎ নির্ভর করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
রয়টার্সের এক জরিপে দেখা গেছে, গত ডিসেম্বরে ওপেক সদস্যভুক্ত দেশগুলোর তেল উৎপাদন কমেছে। এর আগে টানা দুই মাস তেলের উৎপাদন বেড়েছিল। সংযুক্ত আরব আমিরাতের কিছু খনির রক্ষণাবেক্ষণের কারণে তেল উৎপাদন হ্রাস পেয়েছে।
তবে নাইজেরিয়া ও ওপেকভুক্ত কিছু দেশের উৎপাদন বেড়েছে।
বিশ্লেষকদের ধারণা, বিশ্ববাজারে তেলের সরবরাহ সংকট দীর্ঘায়িত হলে আগামী দিনগুলোতে তেলের মূল্য আবার বাড়তে পারে। চীনের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার এবং ওপেকের উৎপাদন হ্রাস বাজার পরিস্থিতিকে আরও অনিশ্চিত করে তুলেছে।
বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, ২০ জানুয়ারি ডোনাল্ড ট্রাম্পের ক্ষমতা গ্রহণের আগপর্যন্ত বিনিয়োগকারীরা তেলের বাজারে বড় ধরনের বিনিয়োগ করবেন না। তবে সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় বাজারে মূল্যবৃদ্ধির শঙ্কা রয়েছে।
তবে মার্কিন প্রশাসন এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের গতি-প্রকৃতির ওপরও তেলের বাজার পরিস্থিতি অনেকাংশে নির্ভর করবে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
বাজার পরিস্থিতি বিবেচনায় তেলের সরবরাহ বৃদ্ধির কারণে স্বল্পমেয়াদে দাম কমলেও দীর্ঘমেয়াদে মূল্যবৃদ্ধির শঙ্কা রয়েছে। কারণ চীনের জ্বালানি চাহিদা বৃদ্ধি এবং ওপেকের সরবরাহ হ্রাস বাজারে প্রভাব ফেলবে।