উচ্চ সুদের বোঝায় দেশীয় উদ্যোক্তারা চরম চাপের মধ্যে রয়েছেন। ঋণের সুদের হার বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধির পাশাপাশি দেশি পণ্যের প্রতিযোগিতা সক্ষমতাও হ্রাস পাচ্ছে। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে দেশীয় পণ্য রপ্তানিতে অসম প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। এসব বিবেচনায় ঋণের সুদহার ১৫ শতাংশের নিচে রাখার সুপারিশ করেছে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত টাস্কফোর্স।
প্রধান উপদেষ্টার কাছে একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন জমা দেয় অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত টাস্কফোর্স। ড. কেএএস মুর্শিদের নেতৃত্বে গঠিত এ টাস্কফোর্সটি অর্থনৈতিক খাতের বিভিন্ন অসামঞ্জস্য দূর করতে প্রয়োজনীয় নীতি ও সুপারিশ প্রদান করে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশের অর্থনীতি বড় চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হলেও তা অপ্রতিরোধ্য নয়। স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার মাধ্যমে সংকট মোকাবিলা সম্ভব। এ লক্ষ্যে একটি স্থায়ী সংস্কার কমিশন গঠনের পরামর্শ দিয়েছে টাস্কফোর্স।
১. আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন: ব্যবসার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে বিশেষ সেল গঠনের প্রস্তাব, যা চাঁদাবাজি ও দুর্নীতি প্রতিরোধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেবে।
2. সহনীয় মুদ্রানীতি: চলতি অর্থবছরের জন্য কঠোর নীতি পরিহার করে উদ্যোক্তা-বান্ধব নীতি গ্রহণের পরামর্শ।
3. ডিজিটাল খাতের বিকাশ: ইন্টারনেটের ওপর ২০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক ও ২ শতাংশ সারচার্জ প্রত্যাহারের সুপারিশ।
4. ব্যাংক খাতে শৃঙ্খলা: ঋণ বিতরণে হয়রানি রোধ এবং সংকটে থাকা ব্যাংকগুলোর জন্য তারল্য সহায়তা নিশ্চিত করা।
✅ সরকারি ক্রয়ে স্বচ্ছতা: সব স্তরে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে দুর্নীতি কমানো।
✅ উদ্যোক্তা ও বিদেশি বিনিয়োগ উৎসাহিত করা: নিয়ন্ত্রণ কাঠামো সহজতর করা।
✅ অর্থনৈতিক কূটনীতির ওপর জোর: বৈদেশিক বিনিয়োগ ও বাণিজ্যের প্রসারে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ।
✅ প্রশাসনিক সংস্কার: সরকারি দক্ষতা বৃদ্ধি এবং দুর্নীতির শেকড় উপড়ে ফেলা।
প্রতিবেদনে বলা হয়, উচ্চ সুদের হার দেশের উৎপাদন খাতকে ব্যয়বহুল করে তুলছে। এতে উদ্যোক্তারা ঋণের বোঝায় বিপর্যস্ত হচ্ছেন এবং দেশীয় পণ্যের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে বেড়ে যাচ্ছে। রপ্তানিকারকদের জন্য এটি বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এই পরিস্থিতি সামাল দিতে অত্যন্ত কঠোর মুদ্রানীতির পরিবর্তে সহনশীল নীতি গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছে। এতে বেসরকারি খাত প্রয়োজন অনুযায়ী ঋণ পেতে পারবে এবং সুদের হারও নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
🔹 সংকটে থাকা ব্যাংকগুলোর জন্য তরলতা সহায়তা নিশ্চিত করা
🔹 মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে স্বাধীন কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রতিষ্ঠার গুরুত্বারোপ
🔹 ব্যাংক খাতে স্বচ্ছতা আনতে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি নিশ্চিত করতে টাস্কফোর্সের প্রতিবেদনে বহুমুখী সংস্কারের সুপারিশ করা হয়েছে। ব্যাংক খাতের সুদহার কমানো, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, দুর্নীতি দমন, বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ গঠন এবং মুদ্রানীতির ভারসাম্য রক্ষা—এসব বিষয় গুরুত্ব দিয়ে বাস্তবায়ন করতে পারলে অর্থনীতিতে ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।