দক্ষিণ আমেরিকার আমাজন থেকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া কোকো গাছ, যেটিকে অনেকেই ‘ঈশ্বরপ্রদত্ত ফল’ বলে থাকেন, এখন বাংলাদেশের মাটিতেও ফল দিচ্ছে। আর এই ব্যতিক্রমী সাফল্যের পেছনে রয়েছেন টাঙ্গাইল জেলার ধনবাড়ী উপজেলার হাজরাবাড়ী গ্রামের এক বৃক্ষপ্রেমিক—তাপস বর্ধন।
২০১৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হল থেকে সংগ্রহ করা একটি কোকো ফলের বীজ দিয়েই তাপস বর্ধনের কোকো চাষের যাত্রা শুরু। পেশায় চারুকলার ছাত্র হলেও প্রকৃতির প্রতি তার ভালোবাসা তাকে এই অনন্য উদ্যোগে যুক্ত করে।
চার বছর আগে তিনি নিজ বাগানে ১৭টি কোকো গাছ রোপণ করেন। এর মধ্যে একটি গাছে এবার ফল এসেছে ১২০টি। সেগুলো থেকে ঘরোয়াভাবে তিনি দুই কেজি কোকো পাউডার তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন।
তাপস বর্ধনের মতে, কোকো গাছ সাধারণত খরা ও অতিবৃষ্টির মতো প্রতিকূলতা সহ্য করতে পারে। তবে জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে না।
তিনি বলেন, “এই গাছে রোগবালাই বা পোকামাকড়ের আক্রমণ খুবই কম। তেমন যত্ন না নিয়েও ফল পাওয়া যায়।”
সারা বছর গাছে ফুল এলেও নভেম্বর থেকে জুন পর্যন্ত ফুলের প্রাচুর্য বেশি থাকে, ফলে বছরজুড়েই ফলন পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়।
বাংলাদেশে কোকো গাছের পরীক্ষামূলক রোপণ শুরু হয় ২০১৪ সালে, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মাধ্যমে। সাভারে ভিয়েতনাম থেকে আনা চারায় শুরু হয় এ পরীক্ষামূলক চাষ। তবে বাণিজ্যিক চাষ এখনো সীমিত পর্যায়েই রয়েছে।
কৃষিবিদ নজরুল ইসলাম বলেন, “বর্তমানে দেশে চাহিদার সব কোকো আমদানিনির্ভর। কোকো চাষ লাভজনক হতে পারে যদি সঠিকভাবে পরিচর্যা করা হয়।”
তাপস বর্ধন ইতোমধ্যে নিজেই একটি নার্সারি তৈরি করেছেন। আগামী জুলাইয়ে তিনি আরও দেড় শতাধিক কোকো গাছ রোপণের পরিকল্পনা করছেন। তার এই সাফল্য দেখে আশপাশের মানুষজনও আগ্রহী হয়ে উঠেছেন, এবং অনেকেই তার কাছ থেকে বীজ নিয়ে কোকো গাছ লাগাচ্ছেন।