ইরান রোববার (২৯ জুন) জানায়, সদ্য শেষ হওয়া ১২ দিনের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষে ঘোষিত অস্ত্রবিরতিতে ইসরায়েল সত্যিই প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকবে কি না, সে বিষয়ে তাদের গভীর সংশয় রয়েছে। এরই মধ্যে তেহরান জাতিসংঘে চিঠি দিয়ে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণ দাবি করেছে।
১৩ জুন, ইসরায়েল ইরানের উপর ব্যাপক বিমান হামলা শুরু করে। এতে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা ও বিজ্ঞানীরা নিহত হন। ইসরায়েল দাবি করে, তাদের এই অভিযান ছিল ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি থেকে বিরত রাখার পদক্ষেপ।
তবে ইরান দীর্ঘদিন ধরে দাবি করে আসছে, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ ও জ্বালানি উৎপাদনের জন্য।
এই সংঘাতের জেরে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের চলমান পারমাণবিক আলোচনা স্থগিত হয়ে পড়ে। এর প্রেক্ষিতে ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান আবদুর রহিম মুসাভি বলেন, “আমরা যুদ্ধ শুরু করিনি, কিন্তু শক্ত হাতে জবাব দিয়েছি। শত্রুপক্ষ প্রতিশ্রুতি রক্ষা করবে কি না, সে বিষয়ে আমরা সন্দিহান।”
রোববার জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসকে লেখা এক চিঠিতে ইরান দাবি করেছে, “ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রই আগ্রাসনের সূচনাকারী। তাদেরকে আন্তর্জাতিকভাবে দায়ী করতে হবে এবং ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।”
যুদ্ধের পরিসংখ্যান, ইরানে নিহত: ৬২৭ বেসামরিক নাগরিক, আহত: ৪,৯০০ জন, ইসরায়েলে নিহত: ২৮ জন (ইরানি পাল্টা হামলায়)।
ইরান দাবি করেছে, তারা ইসরায়েলি গোয়েন্দাদের তথ্য ফাঁসের অভিযোগে ডজনখানেক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে ও বিভিন্ন ড্রোন ও অস্ত্র জব্দ করেছে।
ইসরায়েলি বিমান হামলায় তেহরানের এভিন কারাগারে ৭১ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে রয়েছে কারারক্ষী, বন্দি, প্রশাসনিক কর্মী ও পাশের বাসিন্দারা। ক্ষয়ক্ষতির পর কারাগারের বন্দিদের অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়, যদিও কতজন সরানো হয়েছে তা জানানো হয়নি।
এ কারাগারে শান্তিতে নোবেলজয়ী নার্গিস মোহাম্মদি এবং বিভিন্ন দেশের নাগরিক বন্দি হিসেবে রয়েছেন।
এই যুদ্ধ চলাকালে ইরান পার্লামেন্ট স্টারলিংকসহ অনুমোদনহীন যোগাযোগ প্রযুক্তি নিষিদ্ধ করে নতুন আইন পাস করেছে।
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, “ইরান যদি আবার ৯০ শতাংশ মাত্রায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার দিকে অগ্রসর হয়, তাহলে আরও হামলা চালানো হবে।”ইরান ২০২১ সালে ইউরেনিয়াম ৬০% পর্যন্ত সমৃদ্ধ করেছে, যেখানে ২০১৫ সালের চুক্তি অনুযায়ী সীমা ছিল ৩.৬৭%। ৯০% মাত্রা পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির জন্য প্রয়োজন।
অন্যদিকে, ইসরায়েলের কাছে আনুমানিক ৯০টি পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে বলে দাবি করেছে স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট, যদিও ইসরায়েল কখনও তা স্বীকার করেনি।
ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের পর অস্ত্রবিরতি ঘোষণা করা হলেও উত্তেজনা এখনো কমেনি। ইরান স্পষ্ট জানিয়েছে—বিশ্বাস নেই শত্রুপক্ষের প্রতিশ্রুতিতে, প্রয়োজনে শক্ত জবাব দেবে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি এখন জাতিসংঘে তেহরানের দায়-দাবির প্রতিক্রিয়ার দিকে।