
ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড থেকে প্রায় সাড়ে ১০ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ ও বিদেশে পাচারের অভিযোগে এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলমসহ ৬৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সংস্থাটি জানিয়েছে, এটি তাদের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় দুর্নীতির মামলা।
দুদকের তদন্তে দেখা গেছে, এস আলম গ্রুপের তিন প্রতিষ্ঠান— এস আলম রিফাইনড সুগার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, এস আলম স্টিলস লিমিটেড ও এস আলম ট্রেডিং কোম্পানি লিমিটেড— ইসলামী ব্যাংক থেকে ঋণ হিসেবে নেয় ৯,২৮৩.৯৩ কোটি টাকা, যা সুদ-লভ্যাংশসহ বর্তমানে দাঁড়িয়েছে ১০,৪৭৯.৬২ কোটি টাকায়।
অভিযোগ অনুযায়ী, এই অর্থ জালিয়াতি, প্রতারণা ও ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে আত্মসাৎ করে সিঙ্গাপুরে পাচার করা হয়েছে। এতে ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক, পরিচালক পর্ষদ ও বিনিয়োগ কমিটির সদস্যসহ মোট ৬৭ জনকে আসামি করা হয়েছে।
দুদকের তদন্তে আরও জানা যায়, ২০১৭ সালে এস আলম গ্রুপ ইসলামী ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণে আসার পর থেকেই বিনিয়োগ কার্যক্রমে ভয়াবহ অনিয়ম শুরু হয়। ২০২০ সালে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ আইন ভেঙে এস আলম রিফাইনড সুগার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ঋণসীমা ২,৪০০ কোটি থেকে বাড়িয়ে ৩,৮০০ কোটি টাকা করে। এতে ব্যাংক কোম্পানি আইন ১৯৯১ এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা স্পষ্টভাবে লঙ্ঘিত হয়।
এছাড়া ব্যাংকের আইটি সফটওয়্যার ম্যানিপুলেশন করে অনুমোদন ছাড়াই ঋণসীমা ও মেয়াদ পরিবর্তন করা হয়। সাবেক উপব্যবস্থাপনা পরিচালক তাহের আহমেদ চৌধুরীর নেতৃত্বে প্রায় ৫,৯০০ কোটি টাকার লেনদেন হয়।
এসব অর্থ নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠান— আহসান এন্টারপ্রাইজ, দুলারী এন্টারপ্রাইজ, ইউনাইটেড সুপার ট্রেডার্স ইত্যাদির মাধ্যমে এস আলম গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান যেমন গ্লোবাল ট্রেডিং করপোরেশন, এস এস পাওয়ার, এস আলম স্টিলস, এস আলম সিমেন্ট ও সোনালী ট্রেডার্সে স্থানান্তর করা হয়।
দুদকের নথি অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ৫ ডিসেম্বর রূপালী ব্যাংকের দিলকুশা শাখা থেকে ২৯০ কোটি টাকার সমপরিমাণ (২৩.৫৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) সিঙ্গাপুরের ব্যাংক অব চায়না শাখায় এস এস পাওয়ার-১ লিমিটেডের অফশোর অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করা হয়।
মামলায় অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছেন— এস আলম গ্রুপ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলম, তাঁর ভাই রাশেদুল আলম ও সহিদুল আলম, স্ত্রী ফারজানা পারভীন, ছেলে আহসানুল আলম, মেয়ে মায়মুনা খানম, ইসলামী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মাহবুব উল আলম, সাবেক চেয়ারম্যান ড. নাজমুল হাসান, এবং বিনিয়োগ কমিটির সদস্যসহ ব্যাংকের আরও বহু কর্মকর্তা।
এই মামলা করা হয়েছে দণ্ডবিধির ৪০৯/৪০৬/১০৯/৪২০/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/১২০বি ধারা, দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭-এর ৫(২) ধারা এবং মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২-এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারায়।
দুদক জানিয়েছে, তদন্তের অগ্রগতি অনুযায়ী আরও নতুন নাম যুক্ত হতে পারে। ইসলামী ব্যাংকের এই অর্থনৈতিক কেলেঙ্কারি ইতোমধ্যে দেশের সবচেয়ে আলোচিত দুর্নীতির ঘটনায় পরিণত হয়েছে।