রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রথমবারের মতো জাতীয় সমাবেশ করল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। শনিবার (১৯ জুলাই) বিকেলে অনুষ্ঠিত এই মহাসমাবেশে লাখো নেতা-কর্মীর ঢল নামে, যা শুধু দেশের সংবাদমাধ্যমেই নয়, আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি)-এর প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
এপি জানায়, ২০২৬ সালের নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক শক্তি প্রদর্শনের অংশ হিসেবে জামায়াত এই সমাবেশের আয়োজন করেছে। দলটি আগে থেকেই ঘোষণা করেছিল, তারা এই সমাবেশে ১০ লাখ মানুষের সমাগম ঘটাবে। এপি উল্লেখ করেছে, বাংলাদেশ বর্তমানে এক রাজনৈতিক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে, যেখানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতনের পর একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশ পরিচালনা করছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার আগামী বছর নির্বাচন আয়োজনের কথা বললেও ফেব্রুয়ারিতে ভোট অনুষ্ঠানের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেয়নি। বিএনপি ও অন্যান্য বিরোধীদল এর আগেই আগাম নির্বাচনের দাবি জানিয়েছিল।
এপি আরও জানায়, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানপন্থী হিসেবে পরিচিত জামায়াতের অনেক শীর্ষ নেতা শেখ হাসিনার শাসনামলে মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডিত হয়েছেন। তবে বর্তমানে দলটি নতুনভাবে সংগঠিত হয়ে ৩০০টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চায় এবং অন্যান্য ইসলামী দল নিয়ে জোট গঠন করে দেশের তৃতীয় রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে চায়।
সমাবেশে জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে ৭ দফা দাবি উত্থাপন করা হয়, যার মধ্যে রয়েছে অবাধ নির্বাচন নিশ্চিতকরণ, গণহত্যার বিচার, প্রয়োজনীয় সংস্কার ও নির্বাচনে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থা চালু করা।
অনেক সমর্থক আগের রাত থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় অবস্থান নেয়। শনিবার সকাল থেকেই হাজার হাজার মানুষ ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জড়ো হতে থাকেন, যেখানে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনী আত্মসমর্পণ করেছিল।
সমাবেশে অংশ নেওয়া ৪০ বছর বয়সী ইকবাল হোসেন বলেন, “আমরা এমন একটি বাংলাদেশ চাই যেখানে ইসলাম হবে শাসনের মূলনীতি।” ২০ বছর বয়সী ছাত্র মোহাম্মদ সায়েম বলেন, “আমরা কুরআনের নীতিতে বিশ্বাস করি, তাই এই দেশে বৈষম্য থাকবে না।”
তরুণদের ব্যাপক অংশগ্রহণ, সমাবেশের আবেগঘন বক্তব্য এবং ইসলামী শাসনের দাবিতে এই সমাবেশ জামায়াতের রাজনৈতিক পুনরুত্থানের এক শক্তিশালী বার্তা হিসেবে বিশ্লেষিত হচ্ছে।