পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলায় প্রায় ২০ বছর ধরে ১১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৯৫ জন শিক্ষক ও কর্মচারী বিনা বেতনে চাকরি করছেন। দীর্ঘ সময় বেতন না পেয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন তারা। অনেকের অবসরের সময়ও ঘনিয়ে এসেছে, কিন্তু এখনো এমপিওভুক্তি হয়নি এই প্রতিষ্ঠানগুলোর।
চাকরিবিধি অনুযায়ী আগামী ৪ বছরের মধ্যে অনেক শিক্ষক অবসরে যাবেন। অথচ তারা এখনও সরকারের বেতন কাঠামোর আওতায় আসেননি।
দেবীগঞ্জ উপজেলায় নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ১৮টি। এর মধ্যে গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে ৭টি বিদ্যালয় এমপিওভুক্ত হয়েছে। বাকী ১১টি বিদ্যালয় এখনো এমপিওভুক্ত প্রক্রিয়ায় যায়নি, যার মধ্যে একটি কলেজও রয়েছে।
মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, বিদ্যালয়গুলো ২০০০ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে পাঠদানের অনুমতি পেয়েছে। সেই থেকে নিয়মিত ক্লাস চলছে, শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে ও ভালো ফলাফল করছে। শিক্ষকরা দাবি করছেন, সরকারের এমপিওভুক্তির সকল শর্ত পূরণ করলেও এখনও তাদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।
দেবীডুবা ইউনিয়নের লক্ষীরহাট নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিতাই চন্দ্র রায় বলেন, “২৫ বছর ধরে বেতন ছাড়া ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াচ্ছি। সংসার এখন অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু। জীবনের সোনালী সময় বিদ্যালয়ের পেছনে দিয়েছি, কিন্তু এক টাকাও পাইনি। সরকারের কাছে অনুরোধ, অন্তত প্রতিষ্ঠানটিকে এমপিওভুক্ত করে বাঁচিয়ে রাখুন।”
দন্ডপাল ইউনিয়নের কালীগঞ্জ মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ মোঃ সহিদুল ইসলাম বলেন, “দেশের ৯৭% শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বেসরকারি। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতি সরকারের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি না থাকলে শিক্ষার উন্নয়ন সম্ভব নয়। আমাদের কলেজ ২৫ বছর ধরে চলছে, কিন্তু বেতনভুক্ত হইনি।”
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মোঃ সাইফুল আলম জানান, “নন এমপিও শিক্ষকদের এমপিওভুক্ত করা সরকারের উচ্চপর্যায়ের সিদ্ধান্তের বিষয়। আমরা উপজেলা পর্যায়ে পাঠ্যপুস্তক সরবরাহসহ অন্যান্য সহায়তা দিয়ে যাচ্ছি।”
দীর্ঘ দুই দশক ধরে বেতন ছাড়া কাজ করেও শিক্ষকরা দেশজুড়ে অবহেলিত। শিক্ষা বিশ্লেষকদের মতে, নন এমপিও শিক্ষকদের সমস্যা সমাধানে সরকারকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে, নাহলে শিক্ষা ব্যবস্থার ভিত্তি দুর্বল হয়ে পড়বে।