খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালের রান্নাঘরে অভিযান চালিয়ে রোগীদের খাবার সরবরাহে চরম দুর্নীতির প্রমাণ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এই ঘটনায় স্টুয়ার্ড হাবিবুর রহমানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) দুপুরে দুদক খুলনা কার্যালয়ের উপপরিচালক আব্দুল ওয়াদুদের নেতৃত্বে এ অভিযান পরিচালিত হয়।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালের রোগীদের খাদ্য সরবরাহে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগের ভিত্তিতে এই অভিযান পরিচালিত হয়। তদন্তে দেখা যায়, হাসপাতালে দুপুরের খাবারের জন্য মেন্যুতে মুরগির মাংস, ডাল ও ভাত থাকার কথা ছিল। রোগীর সংখ্যা ছিল ১,৪৯৪ জন। এর মধ্যে সিঙ্গেল ডায়েট বাদ দিয়ে ১,৩৩৫ জনের জন্য খাবার তৈরি করা হয় বলে জানানো হয়। কিন্তু যাচাই করে দেখা গেছে, মাত্র ১,০৯৪ পিস মুরগির মাংস রান্না করা হয়েছিল, যা চাহিদার তুলনায় ৩৩০ পিস কম।
রোগীদের জন্য প্রতিজনকে ৯৫ গ্রাম মাংস দেওয়ার কথা থাকলেও বাস্তবে দেওয়া হয়েছে মাত্র ২৬.৪ গ্রাম। এছাড়া উন্নতমানের চিকন চালের ভাত সরবরাহ করার কথা থাকলেও তা না দিয়ে মোটা রেশনের চাল ব্যবহার করা হয়েছে।
দুদকের অভিযানের সময় একজন ব্যক্তি সাইকেলে কিছু মালামাল নিয়ে পালানোর চেষ্টা করলে তাকে হাতেনাতে গ্রেফতার করা হয়। তার কাছ থেকে কাঁচা মুরগির মাংস ৪ কেজি ৪৯ গ্রাম, ডিম ৪৯টি, লাউ ৪টি, কলা ১৮টি, রান্না করা ভাত দুই পলি, চাল ২ কেজি, তেল, শুকনা মরিচ, কাঁচা মরিচ, পেঁয়াজ, পাউরুটি ৮ পাউন্ড, লবণসহ আরও কিছু সামগ্রী উদ্ধার করা হয়। এসব সামগ্রী রোগীদের জন্য নির্ধারিত ছিল।
দুদক উপপরিচালক আব্দুল ওয়াদুদ জানান, হাসপাতালের ডায়েট চার্ট অনুযায়ী রোগীদের জন্য যে পরিমাণ ও মানসম্পন্ন খাবার সরবরাহ করার কথা, তা করা হয়নি। এমনকি প্রতিদিন রোগীদের খাবার পরীক্ষা করার নিয়ম থাকলেও তা ঠিকভাবে পালিত হয়নি। বরং পরীক্ষার জন্য আলাদা খাবার তৈরি করা হয়, যা রোগীদের সরবরাহকৃত খাবার থেকে আলাদা।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. মো. নুরুল ইসলাম এই অভিযানকে শুদ্ধি অভিযানের অংশ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি জানান, হাসপাতালের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও অনিয়ম দূর করতে এই ধরনের কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।
হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. মিজানুর রহমান বলেন, “আমি মাত্র ২-৩ দিন হলো যোগদান করেছি। অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
হাসপাতালের পরিচালক ডা. মহসীন আলী ফরাজি জানান, খাবারের দায়িত্বে থাকা স্টুয়ার্ড হাবিবুর রহমানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। পাশাপাশি ঘটনা তদন্তে উপপরিচালককে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
হাসপাতালের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, প্রতিদিন রোগীদের খাবারের জন্য বরাদ্দ ১৭৫ টাকা। কিন্তু খাবারের মান ও পরিমাণ সেই বরাদ্দের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। সকালে ডিম, কলা ও পাউরুটি দেওয়ার কথা থাকলেও তা যথাযথভাবে সরবরাহ করা হয় না।
দুদক কর্মকর্তা আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, “রোগীদের খাদ্য সরবরাহে চরম অনিয়ম পাওয়া গেছে। আমরা এ বিষয়ে তদন্ত চালিয়ে যাব এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।”
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের রান্নাঘরে দুদকের অভিযানে ধরা পড়া দুর্নীতি ও অনিয়ম রোগীদের জন্য বরাদ্দকৃত খাদ্য সরবরাহ ব্যবস্থার নৈতিক ও কার্যকর পর্যবেক্ষণের অভাবকে তুলে ধরেছে। তদন্ত কমিটির রিপোর্ট ও ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ এসব অনিয়ম দূর করতে কতটা কার্যকর হবে, সেটিই এখন দেখার বিষয়।