চাঁদপুরের হাইমচরের মাঝিরচরে মেঘনা নদীতে সার বহনকারী এমভি আল বাখেরা জাহাজে সাতজন খুনের ঘটনায় আকাশ মণ্ডল ওরফে ইরফান নামে একজনকে গ্রেফতার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। তাকে বাগেরহাটের চিতলমারী এলাকা থেকে গ্রেফতার করে র্যাব-১১ এর সদস্যরা।
র্যাব-১১ জানিয়েছে, এ বিষয়ে বুধবার দুপুরে বিস্তারিত ব্রিফ করা হবে।
গতকাল জাহাজের মালিক মাহাবুব মুর্শেদ সাতজন খুনের ঘটনায় মামলা দায়ের করেন। মামলার এজাহারে জানা যায়, জাহাজে আটজন নয়, মোট ৯ জন ছিলেন। এদের মধ্যে একজন হলেন আকাশ মণ্ডল ওরফে ইরফান। জাহাজের সুকানি মো. জুয়েল, যিনি আহত অবস্থায় আছেন, লিখিতভাবে এই তথ্য জানান।
এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, আহত সুকানি জুয়েলের গলায় গুরুতর জখম থাকায় তিনি কথা বলতে পারছেন না। তবে ইশারায় তিনি জানান যে, ডাকাত দল দেখলে তিনি তাদের চিনতে পারবেন। এজাহারে আরও বলা হয়েছে, জাহাজে ৯ জন থাকার কথা থাকলেও ৯ নম্বর ব্যক্তির পরিচয় এবং ঠিকানা দিতে পারেননি জুয়েল।
হত্যাকাণ্ডের শিকার সাতজন হলেন, মাস্টার গোলাম কিবরিয়া, গ্রিজার মো. সজিবুল ইসলাম, লস্কর মো. মাজেদুল ইসলাম, শেখ সবুজ, সালাউদ্দিন, আমিনুর মুন্সী, বাবুর্চি রানা কাজী, আহত সুকানি মো. জুয়েল বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
ঘটনার পর পুলিশ জাহাজটি পরিদর্শন করে। সেখান থেকে একটি রক্তাক্ত চাইনিজ কুঠার, একটি ফোল্ডিং চাকু, দুটি স্মার্টফোন, দুটি বাটন ফোন, একটি মানিব্যাগ, নগদ ৮ হাজার টাকা, একটি বাংলা খাতা, একটি সিল, একটি হেডফোন, এক মুঠো ভাত এবং এক টেবিল চা চামচ তরকারি জব্দ করা হয়েছে।
হাইমচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মহিউদ্দিন সুমন জানিয়েছেন, মালিক মাহাবুব মুর্শেদ দায়েরকৃত মামলাটি দণ্ডবিধির ৩৯৬/৩৯৭ ধারায় নথিভুক্ত হয়েছে। মামলার নম্বর ১৭/১৬৬।
এর আগে, বিদেশি এক্সচেঞ্জ হাউস থেকে বেশি দামে ডলার কেনার জন্য বিভিন্ন ব্যাংকগুলোর কার্যক্রমের বিষয়েও র্যাব নজরদারি করছিল। তবে এই মামলায় চিহ্নিত আসামি এখন পর্যন্ত শুধুমাত্র ইরফান।
জেলা প্রশাসক মহসীন উদ্দিন এবং নৌপুলিশ সুপার সৈয়দ মোশফিকুর রহমান মঙ্গলবার বিকেলে নিহতদের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেন। নিহত পরিবারের স্বজনদের জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২০ হাজার টাকার চেক এবং নৌপুলিশের পক্ষ থেকে নগদ ১০ হাজার টাকা প্রদান করা হয়। তবে বাবুর্চি রানা কাজীর পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত না থাকায় তার লাশ হস্তান্তর করা সম্ভব হয়নি।
র্যাব-১১ জানিয়েছে, এই হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত অন্য আসামিদের খুঁজে বের করার প্রক্রিয়া চলছে। বুধবার দুপুরে এই বিষয়ে আরও বিস্তারিত জানানো হবে।
জাহাজে আটকের সময় চাইনিজ কুঠারসহ অন্যান্য আলামত উদ্ধার এবং জুয়েলের দেয়া তথ্য এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে সংঘবদ্ধ ডাকাত দলের সংশ্লিষ্টতার ইঙ্গিত দেয়। তদন্ত কর্মকর্তারা আশা করছেন, ইরফানের জবানবন্দি থেকে হত্যাকাণ্ডের মূল কারণ এবং পরিকল্পনার বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাবে।