নারীর প্রতি সহিংসতা একটি সামাজিক ব্যাধি। পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি ও নারীর অধস্তন অবস্থান সমাজে নারীর উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করছে। নারীর সমঅধিকার নিশ্চিতে ছাত্রসমাজকে শক্তিশালী ভূমিকা পালনের আহ্বান জানানো হয়েছে।
আজ সোমবার বিকেলে রাজধানীতে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ আয়োজিত এক শোভাযাত্রায় বক্তারা এই আহ্বান জানান। শোভাযাত্রাটি ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন থেকে শুরু হয়ে পুরানা পল্টন মোড়ে গিয়ে শেষ হয়। আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ (২৫ নভেম্বর থেকে ১০ ডিসেম্বর) এবং বিশ্ব মানবাধিকার দিবস-২০২৪ উপলক্ষে আয়োজিত এই কর্মসূচির স্লোগান ছিল, ‘পারিবারিক আইনে সমতা আনি, নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ করি।’
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ফওজিয়া মোসলেম। তিনি বলেন, নারীর প্রতি সহিংসতা শুধু নারীর জীবন বিপন্ন করে না; বরং এটি রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক উন্নয়নকে ব্যাহত করে। তিনি নারীর প্রতি সহিংসতা নির্মূলে রাষ্ট্রের দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করার পাশাপাশি সবার ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসের আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু ঘোষণাপত্র পাঠ করেন। এতে উল্লেখ করা হয়, নারীর প্রতি সহিংসতা মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠার পথে বড় বাধা। বাল্যবিবাহ, যৌতুক, যৌন হয়রানি, ধর্ষণ, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের ঘটনা নারীর অগ্রগতিতে বাধা দিচ্ছে। নারীবান্ধব আইন কার্যকর না হওয়া, বিচারিক প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতা নারীর উন্নয়নকে ব্যাহত করছে।
ঘোষণাপত্রে নারীর সমঅধিকার নিশ্চিতে অভিন্ন পারিবারিক আইন প্রণয়ন, বিবাহ, বিবাহবিচ্ছেদ, সম্পত্তির অধিকার ও সন্তানের অভিভাবকত্বের ক্ষেত্রে বৈষম্য দূর করার দাবি জানানো হয়।
বক্তারা মনে করেন, নারী নির্যাতন প্রতিরোধে ছাত্রসমাজকে শক্তিশালী করে গড়ে তুলতে হবে। পাশাপাশি নারীর প্রতি সহিংসতা নির্মূলে নতুন আইন প্রণয়ন এবং বিদ্যমান আইনের সঠিক প্রয়োগ নিশ্চিত করার দাবি তোলা হয়।
জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শোভাযাত্রার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। এতে মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় ও মহানগর কমিটির নেতাসহ বিভিন্ন জেলা শাখার সংগঠক, শ্রমজীবী নারী প্রতিনিধি, গার্লস গাইড, ঢাকার ওয়াইডব্লিউসির শিক্ষার্থী এবং গণসাক্ষরতা অভিযানের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। কর্মসূচি সঞ্চালনা করেন সংগঠনের লিগ্যাল এইড সম্পাদক রেখা সাহা।
এ কর্মসূচি নারীর প্রতি সহিংসতা নির্মূলে একটি শক্তিশালী বার্তা পৌঁছে দেওয়ার পাশাপাশি দেশের সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় অগ্রগতির জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার গুরুত্ব তুলে ধরে।