আগামী মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) সূর্য পশ্চিমাকাশে ডুবে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হবে নতুন বছরের জন্য প্রতীক্ষা। বিদায়ী বছরের শেষ রাতের বিশেষ মুহূর্তকে স্মরণীয় করে রাখতে থার্টিফার্স্ট নাইট উদযাপন হবে পৃথিবীর নানা প্রান্তে। বাংলাদেশেও এ রাতে নতুন বছরের আগমনী বার্তা উদযাপনের প্রস্তুতি চলছে। কক্সবাজারে থার্টিফার্স্ট নাইট উদযাপনের চিরচেনা চিত্র যদিও কিছুটা বদলে গেছে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে।
বিগত দেড়যুগ ধরে থার্টিফার্স্ট নাইট উপলক্ষে কক্সবাজারের সৈকত ও আশপাশের এলাকাগুলো পর্যটকে ভরে যেত। তবে ২০১৭ সালে রোহিঙ্গা শরণার্থীর ঢল এবং পরবর্তী সময়ে কোভিড-১৯ মহামারির কারণে খোলা স্থানে এই উদযাপন বন্ধ রাখা হয়।
এবারও কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, উন্মুক্ত স্থানে কোনো অনুষ্ঠান আয়োজন করা যাবে না। পর্যটকরা নিজেদের মতো করে সৈকতে সময় কাটাতে পারবেন, তবে প্রশাসনের কঠোর নজরদারি থাকবে।
কক্সবাজারের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. তানভীর হোসেন জানান, “থার্টিফার্স্ট নাইট উপলক্ষে সার্বিক আইনশৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে বেশ কয়েকটি ভ্রাম্যমাণ আদালত মাঠে থাকবে। শহরের যানজট নিয়ন্ত্রণেও পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।”
পর্যটন সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, থার্টিফার্স্ট নাইট উপলক্ষে কয়েক লাখ পর্যটকের আগমন ঘটবে। বর্তমানে বড়দিন ও শীতকালীন ছুটির কারণে পর্যটকরা ভিড় জমাচ্ছেন কক্সবাজারে। সমুদ্র সৈকত, ইনানী, হিমছড়ি, রামু বৌদ্ধপল্লী, চকরিয়ার ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক, মহেশখালীর আদিনাথ মন্দিরসহ বিভিন্ন স্পটে পর্যটকদের উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে।
কক্সবাজার ট্যুরিস্ট ক্লাবের সভাপতি মো. রেজাউল করিম জানান, তারকা হোটেলগুলোতে ইনডোর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হচ্ছে। তবে বাইরের অতিথিদের প্রবেশাধিকার সীমিত রাখা হয়েছে।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন জানান, “থার্টিফার্স্ট নাইট উপলক্ষে কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত কোথাও উন্মুক্ত স্থানে আতশবাজি, ফানুস উড়ানো বা গানের কোনো আয়োজন করা যাবে না। তবে হোটেল কর্তৃপক্ষ তাদের নিজস্ব ইনডোর অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে পারবে।”
কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী খোকা বলেন, “রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট বা অন্যান্য ইস্যু সত্ত্বেও কক্সবাজারের সৌন্দর্য পর্যটকদের আকর্ষণ ধরে রেখেছে। যদি নিরাপত্তা নিশ্চিত করে সৈকততীরে থার্টিফার্স্ট নাইট উদযাপন করা যেত, তবে পর্যটন খাতে কয়েকশ কোটি টাকার বাণিজ্য হতো।”
কক্সবাজার নাগরিক ফোরামের সভাপতি আ.ন.ম. হেলাল উদ্দিন জানান, ২০১৭ সালের আগে থার্টিফার্স্ট নাইট উপলক্ষে কক্সবাজার সৈকতে জমকালো আয়োজন করা হতো। আতশবাজি, ফানুস এবং কনসার্টে মেতে উঠতো লাখ লাখ মানুষ। কিন্তু রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট এবং কোভিড-১৯ মহামারি সেই চিত্র বদলে দিয়েছে।
কক্সবাজারে থার্টিফার্স্ট নাইট উদযাপন নিয়ে যে উৎসাহ ও উদ্দীপনা ছিল, তা কিছুটা কমলেও পর্যটকদের ঢল এবং তারকা হোটেলগুলোর সীমিত আয়োজন প্রমাণ করে, নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে মানুষের আগ্রহ কমেনি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি পর্যটকদের নিরাপদে এই উদযাপন করার সুযোগ দিতে প্রশাসনের প্রচেষ্টা প্রশংসনীয়।